শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এবং অভিযোগের চিঠির পরেই, রাজ্যে বন্যায় মৃত ও আহতদের অর্থ সাহায্য মোদী সরকারের

০৯:২৮ পিএম, আগস্ট ৪, ২০২১

মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এবং অভিযোগের চিঠির পরেই, রাজ্যে বন্যায় মৃত ও আহতদের অর্থ সাহায্য মোদী সরকারের

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ DVC-র বিরুদ্ধে। রাজ্যের আজকের এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি দায়ী করলেন কেন্দ্রকে। এদিন দুপুরেই ফোনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল বাংলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে। এরপর নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সেরেই, বিকেলেই নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি ইস্যুতে সরকারিভাবে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্যকে না জানিয়ে, ডিভিডি বারবার জল ছাড়ছে। চিঠিতে এই অভিযোগের কথা উল্লেখ করেই, তিনি লিখেছেন, এটা ‘ম্যান মেড’ বন্যা। ডিভিডি’র পক্ষ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় জল ছাড়া হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

আর এই ফোন এবং পরে লিখিত আকারে অভিযোগের চিঠির পরেই, সন্ধের সময় রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জেরে মৃতদের এবং আহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রের মোদী সরকার। বন্যায় মৃতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় (PMO) থেকে টুইট করা হয়েছে যে, ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বন্যার জেরে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। আহতরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা।’

https://twitter.com/PMOIndia/status/1422926401351475200

উল্লেখ্য, এদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ডিভিডি-র জল ছাড়া নিয়ে চিঠি লেখেন। চারপাতার চিঠিতে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ্য করেন যে, এই বন্যা ম্যান মেড। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক অবস্থানের কথা চিঠিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি লেখেন, পাঞ্চেৎ, মাইথন এবং তেনুঘাট জলাধার থেকে ২ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার জেরে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা কার্যত ডুবতে বসেছে। ইতিমধ্যেই অনেকজনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি চাষের জমি, রাস্তা এবং সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেকথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী আগেও অভিযোগ করেছিলেন যে, ডিভিসি জলাধারের পলি পরিষ্কার করে না। আর এবার ডিভিসি’ অত্যাধিক পরিমাণে জল ছাড়ার কারণে যে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সরাসরি সেই অভিযোগ তুলে চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডিভিসি জলাধারের পলি পরিষ্কার করলে, তিনটি জলাধারে অতিরিক্ত দুই লাখ কিউসেক জল ধরত। ফলে অতিরিক্ত জল ছাড়তে হত না। এমনই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।

এদিন চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী এও উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৫ সালে একাধিকবার ডিভিসি-র সংস্কারের দাবি জানানো হলেও, তা এখনও হয়নি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ডিভিসির ইচ্ছে মতো জল ছাড়ার কারণে ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯-র পর ফের এ বছর রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হল।’ এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে একই ধরনের বন্যা পরিস্থিতি এড়ানো যায়, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। কার্যত প্রত্যেক বছর ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই, তার জেরে যেভাবে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তার একটা স্থায়ী সমাধান চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ লক্ষ ১৩ হাজার ১৮১ জনকে দুর্গত এলাকা থেকে সরানো হয়েছে। ৩৬১ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ৪৩ হাজার ১৯২ জন। মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২৩। এর মধ্যে দেওয়াল ভেঙে ৭, জলে ডুবে ৭, বজ্রপাতে ৬ ও তড়িদাহত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কালিম্পং ধসে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন ২ জন।