বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলায় প্রথম দফার ভোট ২৭ মার্চ। তার এক সপ্তাহ আগে আজ ফের রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ খড়গপুর সদরের বিজেপি প্রার্থী হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় ওরফে অভিনেতা হিরণের সমর্থনে খড়গপুর বিএনআর ময়দানে সভা করছেন তিনি। দিল্লি থেকে বিমানে সরাসরি কলাইকুণ্ডা পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে ফের কপ্টারে চড়ে নামেন খড়গপুরের কল্যাণ মণ্ডপ মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে গাড়িতে করে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে।
এদিন সভায় শুরুতে বক্তব্য রাখেন এই কেন্দ্রের বিজেপির তারকা প্রার্থী হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় ওরফে অভিনেতা হিরণ। তিনি সভামঞ্চ থেকে সরাসরি কাটমানি, এবং তোলাবাজি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেন তৃণমূলকে। এরপর সভায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হলে, তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন খড়গপুরের সভামঞ্চ থেকে দিলীপ ঘোষ তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, বাংলায় সন্ত্রাসের রাজনীতি চালিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেন, 'দুয়ারে নয়, বাংলায় হুইলচেয়ারে সরকার।'
এদিনের সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ‘সাঁওতাল আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই মাটি। এই মাটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের, রানি রাসমণির।’ তিনি বলেন, মানুষের উৎসাহ থেকে পরিষ্কার যে, এবার বাংলায় বিজেপির সরকার আসছে। এদিন তিনি শুরুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতির প্রশংসা করে বলেন যে, 'আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা দিলীপ ঘোষের মতো নেতা পেয়েছি। যিনি দিদির হুমকিতে ভয় পাননি। ভয় এবং হামলা সত্ত্বেও মাটি কামড়ে পড়ে আছেন।'
সভায় নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে ক্রমাগত রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন কড়া ভাষায়। তিনি বলেন, ‘দিদি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তোষণ করে চলেছেন। তিনি বেকার যুবক-যুবতীদের ১০ বছর কেড়ে নিয়েছেন। দিদির পাঠশালা হল নির্মমতা, কাটমানি, সিন্ডিকেটের। দিদির পাঠশালায় অরাজকতার শিক্ষা দেওয়া হয়।’ বাংলার উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করেন যে, ‘বাংলায় দিদি উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বাংলার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দিদি। বাংলার মানুষ ১০ বছর দিয়েছিল। কিন্তু দিদি ১০ বছরে মানুষকে কুশাসন দিয়েছেন। এখানে কেন্দুপাতা বিক্রি করতেও কাটমানি দিতে হয়।’
https://www.facebook.com/narendramodi/videos/802709787002261মোদী সভামঞ্চে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন যে, 'একবার আশীর্বাদ দিন, বাংলায় আসল পরিবর্তন আনবে বিজেপিই। মানুষের সবরকম অসুবিধা দূর করতে দিনরাত পরিশ্রম করব। আদিবাসীদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব। কৃষি ও শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।’ এর সঙ্গে তৃণমূলের 'খেলা হবে' প্রসঙ্গে মোদী বলেন, 'দিদি বলছেন খেলা হবে, কিন্তু বাংলা বলছে খেলা শেষ হবে। এবার খেলা শেষ হবে, বাংলায় উন্নয়ন শুরু হবে।' মোদীর উক্তি, 'দিদির কাছে হিসেব চাইলে, তিনি শুনতে পান না। আমফানের হিসেব চাইলে রেগে যান। প্রতিবাদ করলেই জেলে ভরে দেন। কেন্দ্রের প্রকল্প রাজ্যে প্রণয়ণ করতে দিচ্ছেন না দিদি।’
প্রধানমন্ত্রীর আরও দাবি, বাংলায় ভোটারদের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। মোদীর দাবি, এবার আর তৃণমূল নেত্রীকে গণতন্ত্র হত্যা করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ প্রশাসনকে বুঝতে হবে, গণতন্ত্রের থেকে বড় কিছু আর হয় না। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন যে, 'আপনারা এবার আশ্বস্ত থাকুন, এবার নির্ভয়ে ভোট দিন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলায় মাফিয়ারাজ চলছে। অবৈধভাবে বালি খনন নিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে আক্রমণ করে বলেন যে, কংসাবতী নদীর অবৈধ বালি খনন কার সঙ্গে যুক্ত সবাই জানে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন যে, ‘একদিকে দেশ সিঙ্গল উইনডো সিস্টেমের দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বাংলায় অন্যরকমের সিঙ্গল উইনডো চলছে। বাংলায় সিঙ্গল উইনডো হল ভাইপো উইনডো। এই উইনডো না পেরোলে বাংলায় কিছু হয় না।’
বেকারত্ব সমস্যা প্রসঙ্গে মোদী শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেন যে, বাংলায় ৫০-৫৫ বছর ধরে উন্নয়নই বন্ধ হয়ে আছে। কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল উন্নয়ন বন্ধ করে রেখেছে। দিদি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তোষণ করে চলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেকার যুবক-যুবতীদের ১০ বছর কেড়ে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী খড়গপুরের সভামঞ্চ থেকে হুঙ্কার দিয়ে বলেন যে, ‘দিদি বাংলার যুব সমাজের জন্য চিন্তা করেন না। আমি বাংলার যুব সমাজকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। দিদিকে আর যুব সমাজের সঙ্গে খেলতে দেব না। দিদি বলছেন খেলা হবে, কিন্তু বাংলা বলছে খেলা শেষ হবে। এবার খেলা শেষ হবে, উন্নয়ন শুরু হবে।’
শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে বাংলার সমালোচনা করে মোদী বলেন যে, দেশে প্রায় ৩৫ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন হয়েছে। গোটা দেশ এই নতুন শিক্ষানীতির প্রশংসা হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি চায় গরিবের সন্তানও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোক। কিন্তু ভাষার জন্য তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তারও বিরোধিতা করছে। তিনি বলেন, 'দিদির সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নে বাধা দিচ্ছেন।’
এভাবেই আজ মোদী খড়গপুরের সভামঞ্চ থেকে একের পর এক বিষয়ে চাঁছাছোলা ভাষায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন।