বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

গান গাইছেন উত্তম কুমার! 'বসুশ্রী'র পয়লা বৈশাখের জলসা মাতাতে হাজির থাকতেন হেমন্ত থেকে লতা

০৬:৪৮ পিএম, এপ্রিল ১৪, ২০২১

গান গাইছেন উত্তম কুমার! 'বসুশ্রী'র পয়লা বৈশাখের জলসা মাতাতে হাজির থাকতেন হেমন্ত থেকে লতা

আগামী কাল পয়লা বৈশাখ। নতুন এক বছরের শুরু। আর একসময় এই নতুন বছরের শুরুতেই কলকাতা মেতে থাকত এক জলসার আসরে। তা ছিল, বসুশ্রী সিনেমা হলে পয়লা বৈশাখের জলসা! সেই ১৯৫০ সাল থেকে শুরু। হলের সর্বেসর্বা মন্টু বসুর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিল এই জলসা। তবে যার হাত ধরেপ্রথম বাংলায় নতুন বছর শুরুর দিন বসুশ্রীতে শুরু হয় ‘নববর্ষের জলসা’, তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কিংবদন্তি এই গায়ক না থাকলে বোধহয় এই জলসার জৌলুসের ছিঁটেফোঁটা হদিসও পেত না সারা কলকাতা।

কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোডে অবস্থিত বসুশ্রী হলে প্রায় প্রত্যেক সন্ধ্যেতেই কলকাতার তাবড় তাবড় শিল্পীরা আড্ডা জমাতেন। হলের কর্তা মন্টু বসু, শ্যামল মিত্র, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অজিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ নামী দামী মুখ হাজির থাকতেন রোজই। তবে আড্ডার প্রাণপুরুষ ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এইরকমই এক আড্ডায় পয়লা বৈশাখের ক’দিন আগে, হেমন্তবাবু পয়লা বৈশাখের দিন একটা জমজমাট জলসা করার প্রস্তাব দিলেন। প্রস্তাব শুনে সবাই সাদরে সম্মতিও জানালেন। সে বছর থেকেই বসুশ্রীতে সফর শুরু জলসার।

তখনকার সময়ের বিচারে এই জলসা ছিল একদম পয়লা নম্বরে। কত যে তাবড় তাবড় শিল্পীদের দেখা মিলত তার ইয়ত্তা নেই। শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন এই জলসার অতি পরিচিত কিছু মুখ। তবে সবথেকে আশ্চর্য কাণ্ড ঘটত মহানায়ক উত্তমকুমার এলে৷ মহানায়ককে দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যেত চারিদিকে। একবার ভিড়ের চাপে চোটও পেয়েছিলেন বেশ কিছু মানুষ। তারপর থেকে উত্তমকুমার আসার আগে কোনও ঘোষণাই করা হত না। জলসার দিন হলের সামনের গেট দিয়ে না ঢুকিয়ে অত্যন্ত গোপনে হলের পিছনের গেট দিয়ে আনা হত মহানায়ককে৷ আর হলের সামনে রাস্তায় উপর সামিয়ানা টাঙিয়ে লাগানো হত বেশ কতগুলো মাইক৷ সেই মাইকেই মহানায়কের গলা ভেসে আসত। খুশি মনে অনুষ্ঠান শুনতেন মানুষজন।

প্রথম বছর থেকেই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন বহু মানুষও। জলসার আগের দিন বাংলার বাইরের ভিন্ন রাজ্য থেকেও লোকজন এসে সামনের ফুটপাথে অপেক্ষা করতেন। টিকিটের কোনও ব্যাপার ছিল না তাই জলসা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই হাউসফুল হয়ে যেত বসুশ্রী। লতা মঙ্গেশকর এবং মহানায়িকা সুচিত্রা সেনও এই অনুষ্ঠানে একবারের জন্য এসেছিলেন বসুশ্রীতে। কলকাতায় থাকলে আসতেন কিশোর কুমারও। সঙ্গে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তো ছিলেনই।

তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর বসুশ্রীর মন্টু বসু হেমন্ত বাবুকে ছাড়া জলসা চালিয়ে যেতে রাজি ছিলেন না। তাই বেশ কিছু বছরের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পয়লা বৈশাখের এই অনুষ্ঠান। তবে অজয় বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ফের শুরু হয়েছিল বসুশ্রীর জলসা। তবে স্বর্ণযুগের সেই সব বিখ্যাত শিল্পীদের কাছে এই জলসা ছিল পয়লা বৈশাখের অপর নাম। তাই আজও এই অনুষ্ঠান নিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ভোগেন তাঁরা৷ বছর পুরনো সেই সোনালী দিনগুলো তাদের স্মৃতিতে চিরকালই যেন অম্লান হয়ে থাকবে।