শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কী ভেবে ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত বিজেপির? জানুন সম্ভাব্য কিছু কারণ

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২২, ১০:২৩ এএম | আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম

কী ভেবে ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত বিজেপির? জানুন সম্ভাব্য কিছু কারণ
কী ভেবে ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত বিজেপির? জানুন সম্ভাব্য কিছু কারণ

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করে বড় চমক দিয়েছে বিজেপি। এই চমকের জন্য প্রস্তুত ছিল না রাজনৈতিক মহল। যদিও বিজেপির তরফে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে তালিকায় যে ক’জনের নাম রাখা হয়েছিল, তাতে ধনখড়ের নাম ছিলও না। তার পরেও কী ভেবে অন্তিমলগ্নে বঙ্গের রাজ্যপালের নাম বাছাই করা হল? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে। 

তাহলে কি ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের অঙ্ক কষা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি? শুধু যে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচন তাই নয়, সামনে রয়েছে বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও। এদিকে, জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক শুরু থেকেই বেশ খারাপ। একাধিকবার রাজ্য সকারের সঙ্গে সমালোচনায় জড়িয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আনা হয়েছে। এনডিএ-র উপ-রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এরপর থেকেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। 

জগদীপ ধনখড়ের নাম প্রকাশ করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে তাঁকে  ‍‍‘কৃষক পুত্র’  এবং ‍‍‘জনগণের রাজ্যপাল‍’ বলে অভিহিত করেছেন জেপি নাড্ডা। কিন্তু যাকে নিয়ে এতো হইচই, কী তাঁর পরিচয়? কেনই বা তাঁকে বিজেপি উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করল? জেনে নিন সম্ভব্য কিছু কারণ। 

পেশায় আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ধনখড়। কিন্তু তাঁর এও একটি পরিচয় আছে। তাঁর জাঠ কৃষক পরিবারে জন্ম। আর বিজেপি জগদীপ ধনখড়ের এই পরিচয়ের উপরেই জোর দিচ্ছে। যদিও যে জাঠরা বিজেপির ভোটবাক্সের জন্য বড় বল-ভরসার জায়গা ছিল, সেই জাঠরাই বিজেপির কৃষি আইনের কারণে বিজেপির উপর থেকে সমস্ত ভরসা হারিয়েছে। আইন পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও, সেই জাঠদের পুরনো ভরসার জায়গা এখনও অর্জন করতে পারেনি বিজেপি। জাঠদের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে অখিলেশ যাদবের আসন বাড়ার পিছনেও এই ক্ষোভই বড় কারণ। কাজেই এই ক্ষোভ দূর করার জন্যই এক জাঠকেই (জগদীপ ধনখড়) উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করল বিজেপি। তাছাড়া এই মুহূর্তে কোনও জাঠ নেতা বিজেপিতে কোনও বড় দায়িত্বে বা পদে নেই। এদিকে, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে জাঠরাই নির্বাচনে বড় ভূমিকা নিতে পারে। তাই লোকসভার আগে এক জাঠ সন্তানকে বড় পদে তুলে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদীর বিজেপি। 

দ্বিতীয়ত, জগদীপ ধনখড় জাঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্থানের মানুষ। এদিকে, আগামী বছরই রয়েছে রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচন। তাই এক্ষেত্রে রাজ্যপালকে উপরাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্তের পিছনে রাজস্থানের নির্বাচনও বড় কারণ।

তৃতীয়ত, জগদীপ ধনখড় প্রায় ৩ বছর বাংলা রাজ্যপাল ছিলেন। এই সময়কালে বাংলার সরকারের কাছে তিনি বিজেপির পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও, বিরোধী শিবিরের ভরসা অর্জন করেছেন। এর পাশাপাশি বাংলায় একুশের নির্বাচনের পরে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যেভাবে নিজেই বাংলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাতে বিজেপি শিবির মনে করছে, ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি হলে, বাংলাতেও বিজেপি কিছুটা হলেও সুবিধাজনক জায়গা পাবে। 

চতুর্থত, জগদীপ ধনখড় পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর, তিনি রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রী অর্জন করেন। দ্রুত তিনি রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের একজন হয়ে ওঠেন। রাজস্থান হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীও ছিলেন। রাজস্থান হাইকোর্টে সর্বকনিষ্ঠ প্রসিডেন্টও ছিলেন ধনখড়। পাশাপাশি সাংসদ এবং বিধায়ক উভয়ই ছিলেন। পাকা প্রশাসক হিসেবে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র নিজে তাঁকে শুভেচ্ছে জানাতে গিয়ে বলেছেন যে, সংবিধান সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান। হিন্দি, ইংরাজি দুটি ভাষাতেই তাঁর অসামান্য দক্ষতা আছে। সংবিধান সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান আছে।  বিজেপি মনে করছে ধনখড়ের এই জ্ঞান আগামীদিনে রাজ্যসভা চালাতে সহায়ক হতে পারে।