বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ এমন এক মহান ব্যক্তিত্বের জন্মদিন, যার পরিচয় একটি বা দুটি শব্দে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বরং সেটা করা ধৃষ্টতা বলা যায়। তিনি বাংলার মহান চলচ্চিত্র পরিচালক, একমাত্র বাঙালি পরিচালক, যিনি বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গর্বিত করেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তিনিই প্রথম এদেশে অস্কার নিয়ে এসেছিলেন।
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, আজ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। সত্যজিৎ রায়, শুধু একজন গুণী এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকই নন, তিনি একাধারে পরিচালক, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, প্রচ্ছদ শিল্পী, সঙ্গীতকার। তাঁর সব অনন্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির পেছনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঘটনা। এই যেমন ‘পথের পাঁচালি’র জন্য স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখেছিলেন।
১৯৫৫ সালের ২৬ অগস্ট যদি বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন জন্ম হয়ে থাকে, তাহলে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্মদাতার জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে। ১৯২০ সালের ২ মে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়ের সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায়। আজ, বিশ্ববরণ্যে চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ।
সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ভাবনা 'একম অদ্বিতীয়ম'। পথের পাঁচালি-র সঙ্গে চলচ্চিত্র সফর শুরু করেছিলেন সুকুমার রায়ের এই সুযোগ্য সন্তান। সালটা ১৯৫৫, প্রায় চার দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে মোট ৩৬ টি ছবি পরিচালনা করেছেন এই মহান ও বিশ্ববন্দিত পরিচালক, যার মধ্যে রয়েছে ২৯টি চলচ্চিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। ১৯৯২ সালে বিশ্ব চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের জন্য অস্কার সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।
বাংলার মানুষের জীবন ও যাপনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন সত্যজিৎ রায়।৬ ফুট ৫ ইঞ্চির এক বিশাল মানুষ। এমন এক স্রষ্টা যাঁর ম্যাজিক তাঁর দৈহিক উচ্চতার মতই বিরল ও অবাক করার মতো। যে উচ্চতা ছোঁয়ার মতো আর কেউ এল না। এহেন ব্যক্তিত্ব পর এক ম্যাজিক সৃষ্টি করেছে তিনি। যে হাতে সৃষ্টি করেছেন ‘ফেলুদাকে’ সেই এক হাতেই সাজিয়েছেন ‘চারুলতা’কে। আবার সেই তিনিই ‘পথের পাঁচালী’কে জীবন্ত রূপ দিয়েছেন। আবার হিরক রাজার মতো চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন, যা যেকোনো কালে যেকোনো সময়ে একইরকম প্রাসঙ্গিক। তাঁর প্রতিটা সৃষ্টি আজও প্রত্যেক প্রজন্মের কাছেই সমান জনপ্রিয়। এখানেই তাঁর সবথেকে বড় সাফল্য।
শুধু তো চলচ্চিত্রই নয়, এমনকি সাহিত্যের গণ্ডিতেও আটকে থাকেননি তিনি! সত্যজিতের ক্যালিগ্রাফির কাজ, তাঁর আঁকা, ছবি, প্রচ্ছদ। যা বিভিন্ন সময়ে অবাক করেছে আন্তর্জাতিক মহলের তাবড় তাবড় সমালোচকদের। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের সেরা বাঙালি প্রতিভা তিনি, একথা বললেও খুব একটা ভুল হবে না। নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাঁর ঝুলিতে এসেছে অস্কার, বার্লিনের ভল্লুক, ভেনিসের সিংহ। আর বারংবার গর্বিত করেছেন বাংলাকে। আজও তিনি এক এবং অদ্বিতীয়, তাঁর অসামান্য সৃষ্ট শিল্পের মধ্যে দিয়েই।
উল্লেখ্য, ২০২১-এর ২ মে রবিবাসরীয় সকাল আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হল আজ বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা। তবে, তাঁর মধ্যেও, করোনার চোখ রাঙানি সত্ত্বেও, বাংলার নিজের সন্তান সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উদযাপনে মেতে উঠবে বাংলা। করোনা বিপর্যস্ত কলকাতাতেও হবে বেশ কিছু অনুষ্ঠান। থাকবে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানও। সামাজিক দূরত্ব এবং করোনাবিধি মেনেই হবে সরকারি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তবে, তার বাইরেও বাঙালির ঘরে ঘরে নিজের নিজের মত করে আজ তাঁকে স্মরণ করা হবে, তাঁর শিল্পের হাত ধরে। সঙ্গে চলবে তাঁকে নিয়ে চর্চা এবং স্মৃতিচারণ।