বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‘লখিমপুর কাণ্ডে যোগী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়’, স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

০৩:৩৭ পিএম, অক্টোবর ৮, ২০২১

‘লখিমপুর কাণ্ডে যোগী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়’, স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর-খেরিতে গত রবিবার কৃষক বিক্ষোভ চলাকালীন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ৪ জন কৃষকের মৃত্যু হয়। এরপরেই এই ঘটনাকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে লখিমপুর খেরি। অশান্তির মাঝে পড়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয় ওই দিনই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। এই ঘটনায় নাম জড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের। এই ঘটনায় সারা দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলে হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্ট।

এদিন সেই মামলার শুনানি ছিল। লখিমপুর খেরি কাণ্ডে যোগী সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার আদালতের শুনানি এমনটাই জানাল দেশের শীর্ষ আদালত। এদিন আদালতে শুনানিতে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, ‘লখিমপুর কাণ্ডে আটজনের মৃত্যুর পরেও, যোগী সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এই ভূমিকায় একেবারেই খুশি নয় আদালত।’ লখিমপুর কাণ্ডে তদন্তকারী অফিসারদের সরিয়ে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এদিন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে যে, মূল অভিযুক্ত কোনও সাধারণ মানুষ হলেও কি পুলিশ এই একই ধরনের ব্যবহার করত তাঁর সঙ্গেও?

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আশিস মিশ্রকে সমন পাঠালেও শুক্রবার আদালতে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হননি তিনি। তাঁর খোঁজে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তল্লাশি শুরু করলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমান করা হচ্ছে নেপালে গা ঢাকা দিয়েছেন মন্ত্রী পুত্র। তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখেই এমন ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে কোর্টে জানানো হয়েছে যে, আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার বেলা ১১ টায় হাজিরা দেবেন অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর ছেলে। যোগী আদিত্যনাথের সরকারের পক্ষ থেকেও একই কথা জানানো হয় আদালতে। তা না হলে আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই যুক্তি শোনার পরই আগামী ২০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ততদিন পর্যন্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে।

উল্লেখ্য, এদিন সুপ্রিম কোর্টে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে সওয়াল করেন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে৷ তিনি আদালতে যুক্তি দেন যে, মৃত কৃষকদের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শরীরে কোনও গুলি লাগার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও পদক্ষেপ না করে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

এই যুক্তি শোনার পর প্রধান বিচারপতি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন যে, ‘কেন খুনের মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ? আমরা দায়িত্ববান পুলিশ ও দায়িত্ববান প্রশাসন দেখতে চাই। খুনের মামলায় ৩০২ ধারায় মামলা রুজু হলে অভিযুক্তের সঙ্গে পুলিশ কী ধরনের ব্যবহার করে? আর এক্ষেত্রে কী ব্যবহার করা হয়েছে?’ এখানেই শেষ নয়, প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত যদি কোনও সাধারণ মানুষ হতেন তাহলেও কি পুলিশের একই অবস্থান হত? বেঞ্চ মনে করছে সেক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হত না।’

শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আগামী ২০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ততদিন পর্যন্ত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণ করার জন্য উত্তর প্রদেশ পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি, এখন যাঁরা তদন্ত করছেন সেই অফিসারদেরও সরিয়ে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনানি চলাকালীন আমাদের কাছে বার্তা আসে এক প্রয়াত কৃষকের মায়ের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। আমরা উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে অবিলম্বে তাঁর চিকিৎসা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’