শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘থামার সংকেত দিলেও, গাড়ি না থামিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই গুলি চালানো হয়’! বিবৃতি শাহের

০৪:২৫ পিএম, ডিসেম্বর ৬, ২০২১

‘থামার সংকেত দিলেও, গাড়ি না থামিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই গুলি চালানো হয়’! বিবৃতি শাহের

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যুতে উত্তাল গোটা দেশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাল সংসদ ভবনও। গতকাল নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। টুইট করে তিনি ঘটনায় শোকপ্রকাশও করেছিলেন। পাশাপাশি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে তদন্ত করবে। সঠিক বিচার পাবে মৃত গ্রামবাসীদের পরিবার।

https://twitter.com/AmitShah/status/1467345038615068675

ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তোলপাড় গোটা দেশ। এই আবহে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহে লোকসভা স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বিবৃতিতে তিনি বললেন, আগামিদিনে সেনা অভিযানে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিন লোকসভায় অমিত শাহ বলেন যে, ‘নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিং এলাকার চরমপন্থীদের গতিবিধি সম্পর্কে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ২১ জন কমান্ডো সন্দেহভাজন এলাকায় অভিযান চালান। সেখানে একটি ট্রাক আসতে দেখায়, সেটিকে থামানোর জন্য সংকেত দেওয়া হয় জওয়ানদের তরফে। কিন্তু ট্রাকটি না থেমে পালানোর চেষ্টা করে। গাড়িটিতে চরমপন্থীরা লুকিয়ে ছিল বলে সন্দেহ করেন জওয়ানরা এবং গাড়িটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।’

তিনি আরও বলেন যে, ‘ট্রাকটিতে আট জনের মধ্যে ছয় জনের মৃত্যু হয় সেনার গুলিতে। বাকী দুই জনকে সেনাই নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এদিকে, এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসেতেই সেনার উপর চড়াও হয় স্থানীয় গ্রামবাসীরা। সেনার দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আরও বেশ কয়েকজন জখম হন। গ্রামবাসীরা চড়াও হলে, এক জওয়ান শহীদ হন। সেই সময় আত্মরক্ষার খাতিরে ফের গুলি চালাতে বাধ্য হন জওয়ানরা। এতে ফের ৭ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি এখনও বেশ থমথমে, তবে আগের থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’

https://twitter.com/AmitShah/status/1467789063092506625

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে, নাগাল্যান্ড পুলিশের ডিজিপি এবং পুলিশ কমিশনার ইতিমধ্যেই ওই এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন। ইতিমধ্যেই তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল সিট গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে ওই দলের প্রতিনিধিরা তাঁদের তদন্ত শেষ করবেন।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার পরেই সন্ধ্যায় অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে প্রায় ২৫০ জন উত্তেজিত গ্রামবাসী ভিড় করেছিলেন। আবারও আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের গুলি চালানো হয়। সেই সময় আরও একজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়, জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, “ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করছে সেনা। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। আজ সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনও সেনা অভিযান চলাকালীন যেন এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা না ঘটে, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

গতকালই এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও। গতকালই তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। টুইটে তিনি লেখেন, ‘একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় মন জেলার ওটিং-এ গ্রামবাসীদের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত নিন্দাজনক ঘটনা। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। সিট গঠন করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে, আইন মেনে বিচার হবে। প্রত্যেকের কাছে শান্তিরক্ষার আবেদন জানাচ্ছি।’ এরপরই সিট গঠন করা হয়েছে।

https://twitter.com/Neiphiu_Rio/status/1467329194963070979

গতকালের ঘটনায় এফআইআর হয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। এফআইআরে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় কোনও পুলিশ উপস্থিত ছিল না। কোনও পুলিশের উপস্থিতির জন্য কোনও থানায় আবেদনও জানায়নি আধা সামরিক বাহিনী।

অন্যদিকে, এ বিষয়ে সেনার তরফ থেকেও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে আগেই। সেনার দাবি, গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই অনুপ্রবেশ রোখার উদ্দেশ্যে মন জেলার তিরু এলাকায় অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার শুরু থেকেই নাগাল্যান্ড ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, প্রথম থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। নাগাল্যান্ডে কেন নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হল, তা নিয়ে এখনই সরকারের তরফ থেকে বিবৃতি দেওয়া উচিত। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারের বিবৃতির দাবি জানান। এবিষয়ে এদিন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা আশ্বস্ত করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন সোমবারই বিবৃতি দেবেন। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। একযোগে মুলতুবি প্রস্তাব আনে বিরোধীরা। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, AIMIM সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি-সহ বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ নাগাল্যান্ড ইস্যুতে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। আরজেডি, তৃণমূল সাংসদরাও মুলতুবি প্রস্তাব এনেছেন। সবমিলিয়ে, সংসদে সুর চড়াতে সবরকমভাবে তৈরি বিরোধীরা।