শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

চিনেবাদামের দাম মেটাতে পারেননি বাবা! আমেরিকা থেকে ফিরে ১১ বছর পর ঋণ শোধ ভাই-বোনের

০১:৪১ পিএম, জানুয়ারি ৬, ২০২২

চিনেবাদামের দাম মেটাতে পারেননি বাবা! আমেরিকা থেকে ফিরে ১১ বছর পর ঋণ শোধ ভাই-বোনের

ফেরিওয়ালার থেকে চিনেবাদাম কিনেছিলেন বাবা। কিন্তু সেই মুহূর্তে পকেটে ছিল না মানিব্যাগ বা টাকা-পয়সা। ফলে বাদামের দাম মেটাতে পারেননি তিনি৷ তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর সুদূর আমেরিকা থেকে ফিরে এসে বাবার সেই সেই ঋণ শোধ করলেন দুই ভাই-বোন। নেটমাধ্যমে এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই চোখ কপালে নেটিজেনদের। সকলেই ভাবছেন এমনটাও কি হয়?

অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা ২১ বছরের নেমানি প্রণব এবং তাঁর ছোট বোন সুচিতা বর্তমানে আমেরিকায় পাঠরত। আমেরিকা প্রবাসী এই দুই ভাইবোনই সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনাটি খোলসা করে। জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে মা-বাবার হাত ধরে অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার কাঁকিনাড়া শহরে ইউ কোথাপল্লির সমুদ্রতটে বেড়াতে গিয়েছিলেন ছোট্ট প্রণব এবং সুচিতা। সে সময় প্রণবের বয়স ছিল মাত্র ১০। সে সময় সমুদ্রের ধারের এক ফেরিওয়ালার থেকে কয়েক ঠোঙা চিনেবাদাম কিনেছিলেন বাবা মোহন।

কিন্তু তার দাম মেটাতে গিয়ে বিপত্তি! পকেটে ছিল না মানিব্যাগ৷ তা দেখে ফেরিওয়ালা আশ্বস্ত করেন পরে দাম মেটালেও হবে। তা শুনে তখনকার মতো বাদাম কিনে বাড়ি ফিরেছিলেন মোহন। তবে কথা দিয়েছিলেন, পরে কোনও এক দিন ঠিক বাদামের দাম মিটিয়ে যাবেন। এমনকি ফেরার আগে সঙ্গে থাকা ক্যামেরায় ওই ফেরিওয়ালার ছবি তুলে নিয়ে এসেছিলেন। ফেরিওয়ালার নামও জেনে নিয়েছিলেন, গিনজলা পেড্ডা সত্যাইয়া। তবে কিছুদিন পরই সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান মোহন। পরে দেশে ফিরে ওই সমুদ্রতটে গেলেও আর সত্যাইয়ার দেখা পাননি।

এদিকে নিজের ‘ঋণশোধ’ করতে মরিয়া মোহন এক বন্ধুর কাছে সাহায্য চান। সেই বন্ধুটি হলেন কাঁকিনাড়া বিধানসভা আসনের তৎকালীন বিধায়ক ডি চন্দ্রশেখর রেড্ডি। তিনিই মোহনের কথা শুনে সত্যাইয়ার খোঁজ শুরু করেন। সত্যাইয়ার ছবি নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত সচিব গোবিন্দরাজুলুকেও সত্যাইয়ার খোঁজ করতে বলেন। এভাবে কয়েক বছর খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে নেটমাধ্যমে সত্যাইয়ার ছবি দেখে তাঁর গ্রামের লোকজন গোবিন্দরাজুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গোবিন্দরাজুলুও তা মোহনকে জানালে তড়িঘড়ি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন প্রণব এবং সুচিতা।

এরপর ৩০ ডিসেম্বর সত্যাইয়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর গ্রামে যান দুই ভাইবোন। যদিও গিয়ে জানতে পারেন, ততদিনে সত্যাইয়া মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর পরিবারের হাতে চিনেবাদামের দাম সুদ সমেত ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন প্রণব-সুচিতা। অর্থাৎ দীর্ঘ ১১ বছর পর বাবার ঋণ শোধ করলেন দুই সন্তান।