বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি

০৩:৫০ পিএম, আগস্ট ২৬, ২০২১

পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি

বাংলা কৌতুক সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট তিনি। তাঁর হাস্য-কৌতুকের মোহে আজও মজে আপামর বাঙালি৷ আসল নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও বাঙালি তাঁকে চেনে 'ভানু' নামেই। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদানের কথা প্রায় সকলেরই পরিচিত। কিন্তু এ কথা জানেন কি? যৌবনে পুরোদস্তুর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়! 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সক্রিয় সদস্যও ছিলেন। এমনকি একসময় রিভলভারও পাচার করেছেন তিনি। সেই তিনিই পরে হয়ে উঠেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি এক কৌতুকাভিনেতা।

ওপার বাংলার মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ১৯২০ সালের ২৬ অগাস্ট জন্ম ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্বাধীনতা আন্দোলনে হাতে খড়িটা সেই কৌশোর থেকেই শুরু। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি জড়িয়ে পড়েন বৈপ্লবিক কর্মকান্ডে। বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তকে গুরু মানতেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বিপ্লবী অনন্ত সিংহকেও খুব ভক্তি করতেন তিনি৷ তাঁদের কাছেই সংগ্রামের প্রথম পাঠ তাঁর। সেসময় গোপনে বিপ্লবী বই, প্রচারপত্র পাচার করার কাজে যুক্ত ছিলেন ভানু। এমনকি এক জায়গা থেকে অন্য এক জায়গায় রিভলভার পাচারও ছিল তাঁর কাজ। সেসময় বিপ্লবীদের কাছে গোপনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিতেন তিনি। পরে ব্রিটিশদের হাতে দীনেশ গুপ্তের মৃত্যুর হলে যোগ দেন ঢাকার অনুশীলন সমিতিতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

[caption id="attachment_28603" align="alignnone" width="1280"]পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি[/caption]

সেসময় তখন আশেপাশে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনের ঢেউ। অনুশীলন দলের একাংশের উদ্যোগে তখন তৈরি হল বামপন্থী আরএসপি দল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সেই দলের সঙ্গে যোগ দিলেন ভানুও। তখনই পুলিশের নজরে আসেন তিনি। তবে পুলিশের খাতায় নাম থাকলেও গ্রেপ্তারির হাত থেকে বরাতজোরে বেঁচে যান। এরপর তাঁর নামে হুলিয়া জারি হলে ভানু তখন চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতায় এসেই প্রথমে তিনি চাকরি নিলেন আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানিতে। বালীগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে নিজের বোনের কাছে দু’বছর থাকার পর পরবর্তীতে টালিগঞ্জের চারু অ্যাভিনিউতে বসবাস শুরু করেন ভানু।

১৯৪৬ সালে অভিনয় শিল্পী হিসাবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে চাণক্যের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেসময়ই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ তাঁর। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় ভানুর প্রথম ছবি ‘জাগরণ’। এরপর ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির মাধ্যমেই বাংলা ছবির জগতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ছবির সংখ্যা। ‘মন্ত্রমুগ্ধ’(১৯৪৯), ‘বরযাত্রী’(১৯৫১), ‘পাশের বাড়ি’(১৯৫২), ‘বসু পরিবার’(১৯৫২), 'সাড়ে চুয়াত্তর'(১৯৫৩) ইত্যাদি ছবিতে নিজের অভিনয়ের জাত চেনান ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

[caption id="attachment_28604" align="alignnone" width="1052"]পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি পাচার করেছেন রিভলভার! যৌবনে 'ভারত-ছাড়ো' আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন কৌতুক-সম্রাট ভানু ব্যানার্জি[/caption]

তবে অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের সংগ্রামী মনোভাবকে কোনওদিনই হারিয়ে যেতে দেননি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয় জীবনে কখনও অন্যায়ের সঙ্গে একফোঁটা আপস করেননি তিনি। কলাকুশলীদের সংগঠন বা বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট, সবার আগে বিশেষ তৎপর হতে দেখা যেত একমাত্র তাঁকেই। এই কারণে খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালীন টানা বেশ কিছু বছর কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় এই কিংবদন্তি অভিনেতাকে৷ সেসময়টুকু তিনি জলসা, থিয়েটার বা বিভিন্ন কৌতুক অভিনয়েই মন দিয়েছিলেন। তবে কিছুতেই হাল ছেড়ে দেননি। আবার ফিরে এসেছেন নিজের মেজাজেই।

শত কষ্টের মধ্যেও তাঁর মুখে লেগে থাকতো হাসির ছোঁয়া। আপস না করেও মাথা নীচু করেননি কোনওদিনই। এভাবেই দর্শকের মনের মণিকোঠায় আজও বিরাজমান ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় যেমন চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তেমনই আপামর বাঙালির মনেও অমর এই কিংবদন্তি কৌতুক সম্রাট। তাঁর উজ্জ্বল অভিনয় শিল্পকর্মগুলি আজও তাই সমান প্রাসঙ্গিক। আজ বাংলার হাস্যরসের একচ্ছত্র এই রাজার জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য।