শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

এককালে নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয়ও করতেন খ্যাতনামা বাংলা কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়!

০৭:৪২ পিএম, জুলাই ২৩, ২০২১

এককালে নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয়ও করতেন খ্যাতনামা বাংলা কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়!

আজ ২৩ জুলাই। ১৮৯৮ সালে আজকের দিনেই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরে জন্মগ্রহণ ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার ও গল্পকার। চার দশকের বেশি সময় ধরে সাহিত্য সাধনায় রত ছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে অধিকাংশ বাঙালিই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঔপন্যাসিক হিসেবেই চেনেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই লেখক আসলে নাট্যকারই হতে চেয়েছিলেন। এমনকি মঞ্চে নারী চরিত্রেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

তারাশঙ্করের সাহিত্য জগতে প্রবেশ নাটক লেখার মাধ্যমেই। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ নিয়ে তিনি লেখেন একখানি পঞ্চাঙ্ক নাটক। নাম ‘মারাঠা তর্পণ’। কিন্তু সে নাটক মঞ্চস্থ করার কথা থাকেও তা আর হয়নি। এই ঘটনায় দুঃখ পেয়ে এই নাটকের পাণ্ডুলিপিই নাকি আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন তারাশঙ্কর। আর তার পর থেকেই তিনি নাটক থেকে সরে এসে কথাসাহিত্যে মন দেন তিনি। ১৯২৯-৩০ থেকে ১৯৭১ সালে মৃত্যু অবধি ১টি কাব্যগ্রন্থ, ৬৫টি উপন্যাস, ২০০-এর অধিক ছোটগল্প, ১২টি নাটক, অস্যংখ্য প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী রচনা করেন তারাশঙ্কর।

যদিও মনের এক কোনে নাটক নিয়ে প্রেমটা রয়েই গিয়েছিল। 'কালিন্দী', 'পথের ডাক’, ‘বিংশ শতাব্দী’, ‘দ্বীপান্তর’, ‘যুগ বিপ্লব’, ‘কবি’, ‘কালরাত্রি’, ‘সংঘাত’, ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘দুই পুরুষ’ ইত্যাদি নাটক যেন তারই উদাহরণ! তবে কথাসাহিত্যিক হিসেবে তারাশঙ্কর যেমন খ্যাতনামা, নাট্যকার হিসেবে তাঁর পরিচিতি ততটা হয়নি। তবে তাঁর বেশ কিছু নাটক জনপ্রিয়তার নিরিখে বেশ মঞ্চসফল ছিল। চল্লিশ থেকে ষাটের দশকে তারাশঙ্করের বিভিন্ন নাটক ‘নাট্যনিকেতন’, ‘রঙমহল’, ‘স্টার’, ‘বিশ্বরূপা’ ইত্যাদি বিখ্যাত নাট্যমঞ্চে অভিনীত হতে থাকে। দর্শক-সমাগমও হতো বিপুল।

কথাসাহিত্যিক হিসাবে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছালেও নাটক ছিল তারাশঙ্করের মনের কাছাকাছি। শুধু নাটক লেখাই নয়, মঞ্চে নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন এই সাহিত্যিক। বীরভূমের লাভপুরের অতুলশিব মঞ্চে বহু নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ছিলেন দক্ষ অভিনেতাও। বেশিরভাগ নাটকেই নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। ‘সীতা’ নাটকে তিনি সীতার চরিত্রে অভিনয় থেকে ‘গৃহলক্ষ্মী’ নাটকে মেজবৌ, ‘প্রতাপাদিত্য’ নাটকে কল্যাণী, ‘চাঁদবিবি’ নাটকে মরিয়ম, ‘বঙ্গলক্ষ্মী’ নাটকে বিনোদিনীর চরিত্রকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মঞ্চে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তারাশঙ্কর।

তবে শুধু নারী চরিত্রেই নয়, ‘কর্ণার্জুন’, ‘চিরকুমার সভা’, ‘বশীকরণ’, ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ ইত্যাদি নাটকে পুরুষ চরিত্রেও অভিনয় করেন তারাশঙ্কর। এছাড়াও ‘পার্থসারথি’, ‘পোষ্যপুত্র’, ‘প্রফুল্ল’, ‘মন্ত্রশক্তি’, ‘সরমা’ ইত্যাদি নাটকেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। নাটকে অভিনয় করে প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তারাশঙ্কর। বেশ কিছু নাটকে নির্দেশনাও দেন৷ তবে বেশিরভাগ নাটকই মঞ্চস্থ হতো লাভপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলে। মাত্র একবারই কলকাতার মঞ্চে নেমেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বশীকরণ’ নাটকে অভিনয় করেন সেবার।

আসলে নাটকের প্রতি তারাশঙ্করের ভালবাসা ছিল আজীবন। তাই কথাসাহিত্যিক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মনের গোপনে নাটক-প্রেমকে কেউ হারাতে পারেনি। তাই সুযোগ পেলেই নাটক লেখার পাশাপাশি মঞ্চে অভিনয়েও নেমে পড়তেন। পেতেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি৷ তাঁর নাট্যকারসত্ত্বার সঙ্গে হয়তো আজ অধিকাংশেরই পরিচয় নেই। তবু বাংলা কথা সাহিত্যের পাশাপাশি নাট্যসাহিত্যেও তারাশঙ্করের অবদানকে অস্বীকার করার জায়গা নেই।