শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইতিহাসের গন্ধে বিজড়িত অম্বিকা কালনার প্রাচীন দোল উৎসব! জানুন এর নেপথ্য কাহিনী

০৫:১৮ পিএম, মার্চ ২৭, ২০২১

ইতিহাসের গন্ধে বিজড়িত অম্বিকা কালনার প্রাচীন দোল উৎসব! জানুন এর নেপথ্য কাহিনী

বসন্ত এসে গিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের লালে প্রকৃতিতে এখন রঙের ছোঁয়া। দেখতে দেখতে এসে গিয়েছে বাঙালির রঙের উৎসবও। যাকে আমরা ডাকি দোলযাত্রা। আর দোলযাত্রার প্রাক্কালে আজ জেনে নেব রাজ্যের এক প্রাচীনতম রাজবাড়ির দোলযাত্রার কাহিনী। সেটি হল, ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত পূর্ব বর্ধমান জেলার এক ঐতিহাসিক শহর অম্বিকা কালনার রাজবাড়ি। শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত এই জেলা বর্তমানে পর্যটন মানচিত্রে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। সেই জেলারই অন্যতম এক উৎসব হিসাবে দোলযাত্রার কদরই আলাদা!

বর্ধমান রাজাদের তৈরি অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন মেলে অম্বিকা কালনায়। ১৭৪০ সালে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ রায়ের জননী ব্রজকিশোরী দেবী রাজবাড়িতে লালজী মন্দিরের স্থাপন করেন। তিনি এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে লালজীকে পান এবং ছাপ্পান্ন ভোগের ব্যবস্থা করে লালজীকে প্রতিষ্ঠা করেন । সেই সময়ে রীতি অনুযায়ী ওই সন্ন্যাসীর সম্মানার্থে লালজিকে একটি পোড়া রুটি দেওয়া হত। কালনাবাসীর কাছে লালজী আজও অত্যন্ত আদরের ‘কালনার জামাই’। তিনি রাজার ঠাকুর তাই তাঁর নাম ‘লালজী মহারাজ জিউ’।

[caption id="attachment_7979" align="alignnone" width="1200"]ইতিহাসের গন্ধে বিজড়িত অম্বিকা কালনার প্রাচীন দোল উৎসব! জানুন এর নেপথ্য কাহিনী / নিজস্ব ছবি ইতিহাসের গন্ধে বিজড়িত অম্বিকা কালনার প্রাচীন দোল উৎসব! জানুন এর নেপথ্য কাহিনী / নিজস্ব ছবি[/caption]

অন্যদিকে, শ্যামচাঁদ জিউ বাড়ির অপর নাম মাঈজীর বাড়ি। মাঈজী অকালে নিজের পুত্রকে হারিয়ে শোকে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন । তিনি নিত্য গঙ্গা স্নানে যেতেন ও পুত্রের জন্য বিলাপ করতেন। বর্ধমান রাজের পত্নী মহারানী সেই একই ঘাটে পাল্কি চড়ে গঙ্গাস্নানে আসতেন। পুত্রহারা জননীর কান্না শুনে তিনি মাঈজীকে রাজবাড়ীতে এনে সান্ত্বনা দেন। এরপর মহারানী মাঈজীকে বৃন্দাবন থেকে শ্রী শ্রী শ্যাঁমচাদের একক বিগ্রহ আনতে অনুরোধ করলেন। মাঈজী পায়ে হেঁটে শ্যামচাঁদকে নিয়ে আসেন। তারপর রাধারানীর সঙ্গে শ্যামচাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। সেই কারণেই শ্যামচাঁদকে বলা হয় 'লালজীর জামাই'ও বলা হয়। এবং তারপর থেকেই আজ অবধি কালনার রাজবাড়িতে মহা সমারোহে দোলযাত্রা পালিত হয়ে আসছে।

কালনায় দোলের আগের দিন সন্ধ্যায় রাজবাড়ী কমপ্লেক্সের ভেতরের রাসমঞ্চে চাঁচর উৎসব হয়। এর পরদিন থেকে শুরু হয় দোল খেলা। দোল উৎসবে পালকি চড়ে রাজবাড়ীতে আসেন শ্যামচাঁদ। প্রাচীনকালে তাঁকে মশালের আলোয় পথ দেখিয়ে নিয়ে আসা হত, তবে হাল আমলে তা বন্ধ গিয়েছে। শ্যামচাঁদ ছাড়াও লালজী, কৃষ্ণচন্দ্র, বঙ্কুবিহারি এবং আরও অন্যান্য যুগল বিগ্রহগণ দোল উপলক্ষ্যে মঞ্চে আসেন। ভক্তগণ যুগল বিগ্রহদের চরণে আবির দেন। তারপর ভোগ আরতির পর আবার বিগ্রহগণ পালকি চড়ে নিজের জায়গায় ফিরে যান। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে কালনার রাজবাড়িতে পালিত হয়ে আসছে দোল যাত্রার উৎসব। সেদিন রাজবাড়ি যেন সেজে ওঠে অন্য এক অপরূপ রূপে৷ পূর্ণিমা রাতে সেই রূপ যেন আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে।