শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভাই-ছাতু! বসন্ত সংক্রান্তির দিনে নিজস্বতায় ঘেরা বাংলার গর্ব প্রাচীন এই রীতি

০৩:৫৪ পিএম, এপ্রিল ১৪, ২০২১

ভাই-ছাতু! বসন্ত সংক্রান্তির দিনে নিজস্বতায় ঘেরা বাংলার গর্ব প্রাচীন এই রীতি

“শত্রুর মুখে দিয়া ছাই, ছাতু উড়াইয়া ঘরে যাই”- আজ বাংলা বছরের শেষ দিন। চৈত্র সংক্রান্তি। আজ দিকে দিকে চড়ক-গাজনের পাশাপাশিই বাংলার পল্লীগ্রামের মানুষ মেতে ওঠেন নিজস্ব এক প্রাচীন রীতি পালনে। বাঙালির কাছে এ এক চৈত্র শেষের পার্বণ, 'ভাই-ছাতু'। এ যেন কতকটা ঠিক ভাইফোঁটার মতোই। তবে কালীপুজোর পর নয়, এই রীতি পালিত হয় চৈত্রের শেষ দিনেই। এই বিশেষ দিনে অনেক পরিবারে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় পালন করা হয় ‘ভাই ছাতু’ উৎসব। বিশেষ করে ওপার বাংলার মানুষদের কাছে এই উৎসব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

[caption id="attachment_10492" align="alignnone" width="1200"]ভাই-ছাতু! বসন্ত সংক্রান্তির দিনে নিজস্বতায় ঘেরা বাংলার গর্ব প্রাচীন এই রীতি ভাই-ছাতু! বসন্ত সংক্রান্তির দিনে নিজস্বতায় ঘেরা বাংলার গর্ব প্রাচীন এই রীতি[/caption]

ভাই-ছাতু যেন কিছুটা অকাল ভাইফোঁটা! এদিন দিদিরা ভাইদের মঙ্গল কামনা এবং সুস্বাস্থ্যের কামনায় পালন করে এই উৎসব। দিদি-বোনেরা সকালে স্নান সেরে প্রথমে ভাইয়ের কপালে চন্দনের তিলক কেটে দেন। তারপর পরপর তিনবার ভাইয়ের হাতে তুলে দেন টক দই, তেঁতুল জল, চিনি আর নুন দিয়ে মাখা যবের ছাতুর মণ্ড। ভাই ছাতুতে প্রধানত যবের ছাতুই ব্যবহৃত হয়। মণ্ডের স্বাদ বাড়াতে তাতে যোগ করা হয় মুড়ি, চিঁড়ে, মুড়কি, টক দই। সব শেষে ভাইফোঁটার মতই ভাই-বোন একে অপরের হাতে তুলে দেন উপহার।

[embed]https://www.facebook.com/100008835213236/videos/2562219384082544/[/embed]

এদিন আমিষ খাবার খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ। দিদি-বোনেরা নিজের হাতে ভাইকে পঞ্চব্যঞ্জন রেঁধে খাওয়ায়। পাতে থাকে কাঁচা আম এবং তেতোর নানান পদ। তবে সবটাই নিরামিষ। এরপর বিকেলে বাড়ির মহিলারা কোনও জলাশয়ের ধারে দাঁড়িয়ে, “শত্রুর মুখে দিয়া ছাই, ছাতু উড়াইয়া ঘরে যাই”- বলে কুলোর বাতাস দিয়ে ছাতুর ধুলো উড়িয়ে দেন। পথের ধুলোর সঙ্গেই গিয়ে মেশের সেই ছাতুর ঝড়! এভাবেই চৈত্রের শেষ দিনে আগামী বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়।

তবে বর্তমানে বাংলার লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতিতে এই সব ছোট ছোট উৎসবগুলোকে আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি। আজকাল খুব কম সংখ্যক পরিবারে এই ভাই ছাতুর উৎসব পালিত হয়ে থাকে। তবে যে পরিবারগুলিকে আজও ভাই ছাতুর উৎসব পালন করা হয়, তারা আজও বেশ নিষ্ঠাভরেই পালন করেন এই প্রথা। তাদের দৌলতেই আজও পল্লীগ্রামে টিকে রয়েছে বাংলার নিজস্ব গর্ব এই ছাতু উৎসব।