শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

হাসতে হাসতেই ফাঁসির দড়ি গলায় চড়িয়েছিলেন ক্ষুদিরাম! প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য

০৩:৪৮ পিএম, আগস্ট ১১, ২০২১

হাসতে হাসতেই ফাঁসির দড়ি গলায় চড়িয়েছিলেন ক্ষুদিরাম! প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য

‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী’! হ্যাঁ, হাসিমুখেই ফাঁসির দড়ি গলায় চড়িয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই বীর সন্তান। ১৯০৮ সালের ১১ অগাস্ট মুজফফরপুর ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি হয় তাঁর। মৃত্যুর পরও সাধারণ মানুষের মনে চিরকাল অমর হয়ে রয়েছেন এই মহান বিপ্লবী। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য...

১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্ম নেন ক্ষুদিরাম বসু। অল্পবয়স থেকেই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে সমর্পণ করার ইচ্ছে জেগে ওঠে তাঁর মনে। বাল্যকালেই বারিন্দ্র কুমার ঘোষের মতো বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। তাঁর আদর্শে দীক্ষিত হয়েই মাত্র ১৫ বছর বয়সে দেশকে বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল হন ক্ষুদিরাম।

বয়স যখন ১৬, ক্ষুদিরাম তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে থানার কাছে বোমা ছুঁড়েছিলেন। এরপর স্থানীয়দের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী পুস্তিকা বিতরণের জন্য তাঁকে আটকও করে ইংরেজ শাসকরা। ক্ষুদিরাম ছিলেন বিখ্যাত অনুশীলন সমিতির সদস্য। তাঁর উপর দায়িত্ব এসে পড়ে প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যার। ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাসে, কিংসফোর্ডকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মুজফফরপুরে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন ক্ষুদিরাম বসু ও আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ম্যাজিস্ট্রেট সেই গাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বদলে গাড়িতে থাকা দুই মহিলা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা মারা যান।

এদিকে, ব্রিটিশ পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে দুই বিপ্লবীকে। তবে গ্রেপ্তারের আগেই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল চাকি। পরে ক্ষুদিরাম বসুকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার চেষ্টা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন ক্ষুদিরাম। তাঁকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়। এরপর ১১ অগাস্ট মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন ক্ষুদিরাম। গুনগুন করে গাইতে থাকেন, 'হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী'। এরপর হাসতে হাসতেই ফাঁসিতে চড়েন ভারতের এই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী।

ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হয়েছিল তৎকালীন মুজফফপুর সংশোধনাগারে। মহান বিপ্লবীকে সম্মান জানিয়ে বর্তমানে ক্ষুদিরামের নামেই সেই কারাগারের নাম রাখা হয়েছে। দেশের জন্য বিপ্লবীর এই আত্মত্যাগ প্রতিটি দেশবাসীর মনের মণিকোঠায় চিরকাল অমলিন। তাঁকে স্মরণ করেই মৃত্যুবার্ষিকীকে রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম।