বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

'মৃত্যু'কে বরাবর ঠাঁই দিয়েছেন তাঁর কাব্যে! প্রয়াণ দিবসে স্মরণে রবীন্দ্রনাথ

০৬:৪৩ পিএম, আগস্ট ৬, ২০২১

'মৃত্যু'কে বরাবর ঠাঁই দিয়েছেন তাঁর কাব্যে! প্রয়াণ দিবসে স্মরণে রবীন্দ্রনাথ

আজ ২২ শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। বাঙালির কাছে এ এক ঘোর কালো দিন। আজকের দিনেই অমৃতলোকে বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন কবি। মৃত্যু এসে কেড়েছিল 'মৃত্যুঞ্জয়ী' কবির প্রাণ। তবে মৃত্যুভয় কোনওকালেই গ্রাস করেনি তাঁর চেতনাকে। বরং রবীন্দ্রকাব্যে মৃতুচেতনাই ফিরে এসেছে বারবার। নিজের জীবন কালে কাছের এত মানুষের মৃত্যু তিনি দেখেছিলেন যা মনে হয় এক জন্মে আর কেউই দেখেনি। তবে তার পরও থেমে থাকেননি তিনি, বরং মেতেছেন নতুন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। আর তাই তাঁর সৃষ্টি সাহিত্যেও ছোঁয়া মেলে সেই গভীর মৃত্যুচিন্তারই। প্রিয়জনের মৃত্যুর বিরহ-যন্ত্রণাই হয়ে উঠেছিল তাঁর ভাব প্রকাশের অস্ত্র।

"মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান", ভানুসিংহের পদাবলীতে মৃত্যুকে একপ্রকার আহ্বান করেই লিখেছিলেন কবি৷ নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের ‘মৃত্যু’ কবিতায় তিনিই বলেন- “মৃত্যু অজ্ঞাত মোর, আজি তার তরে… মৃত্যুকে আমি ভালো বাসিব নিশ্চয়।” স্নেহময়ী বৌদি থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন, প্রিয়তমা স্ত্রী, প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র-কন্যা, ভাইপো, নাতি সহ আরও বহু কাছের মানুষের মৃত্যুই নিজের চোখের সামনে দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই প্রতিটি মৃত্যুর পরই কিন্তু গভীর ভাবে শোকাহত হলেও প্রকাশ্যে তা কখনোই প্রকাশ করেননি রবীন্দ্রনাথ। বরং লেখনীর মাধ্যমেই বরাবর প্রতিফলিত হয়ে এসেছে তাঁর যন্ত্রণা, মৃত্যু নিয়ে তাঁর চিন্তাধারা। তাঁর লেখা গানেও পাওয়া যায় নিজের যন্ত্রণার সেই প্রকাশ, “আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।”

[caption id="attachment_25422" align="alignnone" width="1280"]'মৃত্যু'কে বরাবর ঠাঁই দিয়েছেন তাঁর কাব্যে! প্রয়াণ দিবসে স্মরণে রবীন্দ্রনাথ 'মৃত্যু'কে বরাবর ঠাঁই দিয়েছেন তাঁর কাব্যে! প্রয়াণ দিবসে স্মরণে রবীন্দ্রনাথ[/caption]

কবির ভাবনায় এও উঠে এসেছে, “জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার পরিচয় পেতে হবে। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে রয়েছে, জীবনের পরে তার যথার্থ শ্রদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায়নি। যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দি করতে ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে ধরেছে সে মৃত্যুই নয়, সে জীবন।” নিজের মৃত্যু নিয়েও একপ্রকার উদাসীনই ছিলেন তিনি, তবে হার মানতে শেখেননি। তাই তো তিনিই লিখে যেতে পারেন- “আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে/ যাব আমি চলে।” প্রকৃত অর্থেই তো তিনি ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী। আসলে রবীন্দ্রনাথের জীবন দর্শনের ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলেছিল মৃত্যু। তাই সেই মৃত্যুর নান্দনিক দিকই খুঁজে বের করতে সারাজীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুচিন্তাতেও সেই নান্দনিকতা ছিল স্পষ্ট। নিজের আসন্ন মৃত্যুর আভাস পেয়েছিলেন আগেই। মৃত্যুকে হাসিমুখে তিনি বলেছেন, “এ বিশ্বেরে ভালোবাসিয়াছি। এ ভালোবাসাই সত্য এ জন্মের দান। বিদায় নেবার কালে, এ সত্য অম্লান হয়ে মৃত্যুরে করিবে অস্বীকার।" জীবনের শেষদিনগুলিতে শান্তিনিকেতনে রোগশয্যায় শুয়েই তিনি লিখলেন "আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা।" মৃত্যুকে হয়তো এত সহজে অস্বীকার করা যায় না। কবিও তা পারেননি।

দিন পেরোতে লাগল। অগাস্টের প্রথম দিন থেকেই রবীন্দ্রনাথের ‘হিক্কা’ শুরু হল। কষ্ট সাময়িক লাঘব হলেও। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও অসার হয়ে পড়ল। এরপর ২২শে শ্রাবণ, ৭ অগাস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন কবি। তবে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে মৃত্যুর এক অন্য সত্ত্বা রূপে চিনিয়ে গিয়েছেন তিনি। বুঝিয়ে গিয়েছেন, মৃত্যু রয়েছে বলেই আমাদের বেঁচে থাকাটা এত সুন্দর, এত প্রিয়, এত সার্থক। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য...