বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

‘তোমার সাফল্য দেশের অগুনতি তরুণের কাছে অনুপ্রেরণা’! বঙ্গতনয় অচিন্ত্যর প্রশংসায় মোদী-মমতা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২, ১২:২৪ পিএম | আপডেট: আগস্ট ১, ২০২২, ০৬:৩৩ পিএম

‘তোমার সাফল্য দেশের অগুনতি তরুণের কাছে অনুপ্রেরণা’! বঙ্গতনয় অচিন্ত্যর প্রশংসায় মোদী-মমতা
‘তোমার সাফল্য দেশের অগুনতি তরুণের কাছে অনুপ্রেরণা’! বঙ্গতনয় অচিন্ত্যর প্রশংসায় মোদী-মমতা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কমনওয়েলথ গেমসে ফের দেশের ঝুলিতে এল তৃতীয় সোনা। বার্মিংহ্যামে চলতি কমনওয়েলথ গেমসে এবার দেশকে সোনা এনে দিলেন বাংলার ছেলে অচিন্ত্য শিউলি। পুরুষদের ভারোত্তলনে ৭৩ কিলো বিভাগে স্ন্যাচিংয়ে অচিন্ত্য অনায়াসে রেকর্ড গড়লেন। প্রথম চেষ্টায় তুললেন ১৩৭ কিলো। পরের বার তুললেন ১৪০ কিলো এবং শেষ বার ১৪৩ কিলো। রেকর্ড গড়লেন অচিন্ত্য। ক্লিন এবং জার্ক বিভাগে প্রথম চেষ্টায় অচিন্ত্য তোলেন ১৬৬ কিলো। পরের বার ১৭০ কিলো তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও, তৃতীয় চেষ্টায় সেই ওজন তুলতে সক্ষম হন তিনি। গেমস রেকর্ড গড়েন মোট ৩১৩ কিলো ওজন তুলে। তবে, বঙ্গতনয় অচিন্ত্যর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার এই যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না। অনেক বাধা টপকে আজ অচিন্ত্য এই সাফল্য অর্জন করেছেন। 

অচিন্ত্যর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা দেশ। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন। এবার বাংলা থেকে প্রথম পদক এল কমনওয়েলথ গেমসে। হাওড়ার বাসিন্দা অচিন্ত্যর সোনা জয়ে ইতিমধ্যেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘আমাদের সবার কাছে গর্বের মুহূর্ত যে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ অচিন্ত্য শিউলি কমনওয়েলথ গেমসে তৃতীয় সোনা জিতেছে। ওঁকে আন্তরিক অভিনন্দন। তোমার সাফল্য দেশের অগুনতি তরুণের কাছে অনুপ্রেরণার কাজ করবে। ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।’

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার সোনা জয়ী অচিন্ত্যর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কমনওয়েলথ গেমসের জন্য রওনা দেওয়ার আগে, আমার সঙ্গে অচিন্ত্য শিউলির কথা হয়। আমাদের মধ্যে আলোচনা হয় ওঁ কীভাবে মা ও দাদার থেকে সমর্থন পেয়েছিল তা নিয়ে। আমি আশা করছি এবার ওঁ সময় পাবে, সিনেমা দেখবে।’

বাংলার ছেলে অচিন্ত্য শিউলির বাবা দিন মজুরের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংসারের নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব। কিন্তু কখনও নিজের স্বপ্ন থেকে সরে আসেননি অচিন্ত্য। মা-দাদা এমনকি প্রতিবেশীদেরও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, একদিন দেশকে গর্বিত করবে এই ছেলেটা। ৯ বছর আগেই মারা গিয়েছেন অচিন্ত্যর বাবা। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পড়ে মা পূর্ণিমা শিউলির উপরে। শুরু হয় এক অন্য লড়াই। জরির কাজ শুরু করেন পূর্ণিমা শিউলি। তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন দুই ভাই অচিন্ত্য আর আলোক। খুব কষ্ট করেই চলত সংসার। শত কষ্ট, দারিদ্র্য যন্ত্রণার মধ্যেও লক্ষ থেকে বিচ্যুত হননি অচিন্ত্য। আর তাঁর সেই জেদ আর লক্ষে অবিচল থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই, আজ তাঁকে এই সাফল্য এনে দিল। 

বার্মিংহ্যামে চলতি কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের হয়ে প্রথম পদক এনেছিলেন সংকেত সরগর। ৫৫ কেজি বিভাগে রেকর্ড গড়ে রুপো জেতেন তিনি। এরপর ৬১ কেজি বিভাগে দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দেন গুরুরাজা পূজারি। পাশাপাশি ৪৯ কেজি বিভাগে মীরাবাই জেতেন সোনা। মীরাবাঈ চানুর হাত ধরেই দেশের ঝুলিতে প্রথম সোনার পদক আসে। এরপর ভারোত্তোলনেই দেশকে চতুর্থ পদক এনে দেন বিন্দিয়ারানী দেবী। ৫৫ কেজি বিভাগে রুপো জেতেন তিনি। আর এবার ভারোত্তোলনেই দেশকে তৃতীয় সোনা তথা ষষ্ট পদক এনে দিলেন বাংলার ছেলে অচিন্ত্য। এখন অচিন্ত্য স্বপ্ন দেখছেন প্যারিস অলিম্পকে পদক জয়ের।

প্রসঙ্গত, এবছর শুরুতেই ভারতের ভারোত্তোলক কোচ বিজয় শর্মা আগেই বলেছিলেন যে, এবার ভারোত্তোলনে ভারত চমকে দেবে সবাইকে। তাঁর কথা এবার বাস্তবেও মিলে যাচ্ছে। ভারোত্তোলনে ভারতের দাপট বজায় রয়েছে। চলতি কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনের হাত ধরেই এল ৬ টি পদক।