শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

শচীন আউট, ম্যাচ বন্ধের পর কাম্বলির কান্না! ২৬ বছর আগে এই দিনেই ইডেনে ঘটেছিল সেই ট্র‍্যাজেডি

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২২, ০৭:৩২ পিএম | আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২২, ০১:৩২ এএম

শচীন আউট, ম্যাচ বন্ধের পর কাম্বলির কান্না! ২৬ বছর আগে এই দিনেই ইডেনে ঘটেছিল সেই ট্র‍্যাজেডি
শচীন আউট, ম্যাচ বন্ধের পর কাম্বলির কান্না! ২৬ বছর আগে এই দিনেই ইডেনে ঘটেছিল সেই ট্র‍্যাজেডি

১৯৯৬ সালের ১৩ মার্চ। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের এক অন্যতম কালো দিন। ইডেনের মাঠে সেদিন জ্বলে উঠেছিল আগুন। চারপাশে বিশৃঙ্খলার ঢেউ। সমর্থকদের মারামারি-হাতাহাতিতে বিশ্বকাপের মঞ্চ পরিণত হয়েছিল দুঃস্বপ্নে। সেই মর্মান্তিক ট্র‍্যাজেডির স্মৃতি আজও বুকে নিয়ে হাহাকার করেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই ট্র‍্যাজেডির ঘা যেন এখনও দগদগে!

সেদিন ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। ইডেনে আয়োজিত হয়েছিল সেই ম্যাচ। স্টেডিয়ামের গ্যালারি জুড়ে সেদিন কাতারে কাতারে সমর্থক। সকলেরই আশা প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ঘরের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছে যাবে ভারত। শুরুটাও খারাপ হয়নি। টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন তৎকালীন টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন মহম্মদ আজাহারউদ্দিন। আর শুরুতেই ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলেন লঙ্কানরা। ফলে ভারতীয় সমর্থকদের আশা যেন আরও চওড়া হচ্ছিল।

তবে এরপরই খেলা ঘুরিয়ে দেন বিপক্ষের অরবিন্দ ডি সিলভা এবং রোশন মহানামা। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন নিজেদের। এরপর হাল ধরেন অধিনায়ক অর্জুনা রনতুঙ্গা। এবং শেষদিকে হাসান তিলকরত্নে এবং চামিন্দা ভ্যাসের চেষ্টায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে লঙ্কান দলের ইনিংস শেষ হয় ২৫১/৮-এ। ভারতের জন্য টার্গেট থাকে ২৫২। এদিকে, টিম ইন্ডিয়ার হয়ে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট খুইয়ে বসেন ওপেনার নভজ্যোৎ সিং সিধু। তবে সিধু আউট হলেও আরেকটা দিক ধরে ছিলেন শচীন তেন্ডুলকর। তবে জয়সূর্যের বলে শচীন স্ট্যাম্প আউট হতেই দুঃস্বপ্নের শুরু।

একটা সময় ভারতের স্কোর ছিল ৯৮/২। ৮ উইকেট হাতে রেখে তখনও দরকার ছিল ১৫৪ রান। কিন্তু সেই রান তোলা তো দূরের কথা আর মাত্র ২২ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। পরপর আউট হয়ে যান আজাহারউদ্দিন, জাভাগল শ্রীনাথ, অজয় জাদেজা, নয়ন মোঙ্গিয়া, আশিস কাপুর। সেসময় ক্রিজে ছিলেন বিনোদ কাম্বলি এবং অনিল কুম্বলে। কিন্তু প্রিয় ক্রিকেট তারকাদের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে ভারতীয় সমর্থকদের রোষ পরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উপর। তীব্র ক্ষোভের চোটে লঙ্কানদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হতে থাকে বোতল, প্লাস্টিক ব্যাগ, ক্যান। গ্যালারির একাংশ জ্বালিয়ে শুরু হয় ভাঙচুর। অনেকে আহতও হন।

এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে অস্বীকার করেন অর্জুনা রনতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভারা। তাঁরা আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ দাবী করেন। বেগতিক দেখে এরপর বাকি ম্যাচ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করেন। আর তারপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিনোদ কাম্বলি। তাঁর কাঁদতে কাঁদতে বাইশ গজ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসার দৃশ্য যেন আজও সমর্থকদের চোখে জ্বলজ্বল করে। সেবার ইডেনের ওই ট্র‍্যাজিক কাণ্ডের পর হতাশায় ভেঙে পড়েন সমর্থকরা। একরাশ আশা নিয়েও স্বপ্ন সেবার সফল হয়নি। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সেই স্মৃতির ভার আজও খুব কঠিন।