বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

ফুসফুসে সুপারি! একরত্তি শিশুর প্রাণরক্ষা করল এসএসকেএম হাসপাতাল, আপাতত স্থিতিশীল ওই শিশুকন্যা

০৩:০২ পিএম, আগস্ট ৩১, ২০২১

ফুসফুসে সুপারি! একরত্তি শিশুর প্রাণরক্ষা করল এসএসকেএম হাসপাতাল, আপাতত স্থিতিশীল ওই শিশুকন্যা

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেড় মাস আগে একরত্তি শিশুকন্যার ফুসফুসে ঢুকে আটকে গিয়েছিল সুপারির টুকরো। কিছুই বুঝতে পারেননি ওই শিশুকন্যার পরিবারের কেউ। এরপর থেকেই সাংঘাতিক জ্বর আসতে শুরু করে ওই শিশুকন্যার, জ্বরে সঙ্গে ছিল অসম্ভব কাশি। আবার শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। অবশেষে অসমের সেই একরত্তি শিশুকন্যার ফুসফুসের সুপারি বার করে, তাকে নতুন জীবনদান করলেন এ রাজ্যের এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড নেক সার্জারি।

ওই একরত্তি শিশুকন্যার বাড়ি অসমের ধূবড়িতে, নাম মনীষা। মাস দেড়েক আগে ঘটনার সূত্রপাত। খেলতে খেলতে সুপারি গিলে ফেলেছিল ওই শিশুকন্যা। প্রথমে কিছুই বোঝা যায়নি। কিন্তু গিলে ফেলা সুপারি আটকে গিয়েছিল ফুসফুসে। এর জেরে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, সংক্রমণের কারণে ডানদিকের ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না তার। সবসময় কাশতে থাকত ছোট্ট মনীষা। প্রথমে বাড়ির লোকজন মনে করেন, হয়ত ঠাণ্ডা লেগেছে। তবে, ওষুধ খেয়েও কোনও কাজ হচ্ছিল না। কমছিল না কাশি।

ধীরে ধীরে সংক্রমণ নিউমোনিয়ার আকার নেয়। গভীর চিন্তায় কোলের শিশুকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যায় তার পরিবার। এরপর মেয়ের চিন্তায় জেরবার ছোট্ট শিশুকন্যাকে নিয়ে প্রথমে অসমের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবা-মা। সেখান থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল। আবার সেখান থেকে কোচবিহার জেলা হাসপতালে ঘুরে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। এখানেই সিটি স্ক্যানে প্রথম ধরা পড়ে সুপারির অবস্থান। যা দেখে, অবাক হয়ে যান পরিবারের লোকজনও।

এদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সমস্যার আসল কারণ ধরা পড়লেও, সেখানে সুপারির টুকরো বের করার মতো যন্ত্রপাতি ছিল না। আর তাই কলকাতার এসএসকেএম-এ রেফার করা হয় শিশু কন্যাটিকে। তড়িঘড়ি পাঁচশো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, এসএসকেএম-এ মেয়েকে নিয়ে আসেন তার মা-বাবা। ততক্ষণে মনীষার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছিল।

এরপর এসএসকেএম-এ শিশুটির ব্রঙ্কোস্কোপি করেন ‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’র চিকিৎসকরা। তাঁরা বুঝতে পারেন যে, শিশুটির ফুসফুসের ডান দিকে ‘ফরেন পার্টিকল’ কিছু একটা আটকে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ ইনস্টিটিউটের প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে সেই ‘ফরেন পার্টিকল’ বের করতে অস্ত্রোপচার শুরু করেন ডা. অরিন্দম দাস, ডা. সন্দীপ্তা মিত্র। সোমবার দুপুরে রিজিড ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমে বের করা হয় সুপারির টুকরোগুলি।

উল্লেখ্য, এই পদ্ধতিতে, শ্বাসনালিতে শক্ত নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নলের মাথায় থাকে একটি আলো। সেই আলোতেই দেখা যায় ডানদিকের ফুসফুসে আটকে সুপারিটি। ফরসেপ দিয়ে টেনে আনা হয় সুপারির টুকরোগুলি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সুপারির টুকরো চারটি টুকরো বের করার পর, আপাতত স্থিতিশীল আছে ওই শিশুকন্যা। আপাতত আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাকে। পাশাপাশি চিকিৎসকরা এও জানিয়েছেন যে, শিশুটির নিউমোনিয়ার জন্যও দায়ী ওই সুপারির চারটি টুকরোই।

‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’-র প্রধান অরুণাভবাবু জানিয়েছেন, মাসের পর মাস কাশি, সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও যদি কাশি না সারে, তাহলে একবার ব্রঙ্কোস্কোপি করে দেখা উচিত শরীরে কোনও ফরেন পার্টিকল রয়েছে কি না। তাঁর মতে, শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে অনেক সময় অহেতুক জটিলতা তৈরি হয়। যা একেবারেই কাম্য নয়। এদিকে, শুধুমাত্র আমাদের রাজ্যই নয়, আশেপাশের রাজ্যের মানুষও এ রাজ্যের চিকিৎসার উপর ভরসা রাখছে, ছোট্ট মনীষার ঘটনা তারই অন্যতম উদাহরণ,