শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আজ রাতেই দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন শুভেন্দু অধিকারী! তবে কি ফের বৈঠক শাহ-নাড্ডার সঙ্গে?

০৬:৪৪ পিএম, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১

আজ রাতেই দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন শুভেন্দু অধিকারী! তবে কি ফের বৈঠক শাহ-নাড্ডার সঙ্গে?

নিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত স্বস্তিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখনই গ্রেফতার করা যাবে না তাঁকে। সোমবার এমনটাই জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যার জেরে নিজের দেহরক্ষীর মৃত্যু-সহ মোট পাঁচটি মামলায় আপতত স্বস্তি পেলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে তিনটি মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর বাকি ২টি মামলার তদন্ত চললেও কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।

এদিন প্রাক্তন দেহরক্ষী খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই সিআইডি-র হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আবার এদিনই দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন শুভেন্দু অধিকারী। রাতেই তিনি দিল্লির বিমান ধরবেন। এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর দিল্লি যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ায় কিছু দলীয় কর্মসূচি রয়েছে বিরোধী দলনেতার। এরপর আজ রাতেই দিল্লির বিমান ধরবেন তিনি। আর শুভেন্দুর এই দিল্লি যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাথিয়েছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে, এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু কেউ বলছেন না।

তবে, অন্যদিকে, আরও একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের তরফে নজিরবিহীনভাবে যে পদ্ধতিতে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রাজ্য বিজেপির অসন্তোষের কথাই কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাতেই দিল্লি সফর শুভেন্দু অধিকারীর। এর পাশাপাশি এই বিষয়টিতে আইনি পথে এগোনোর ইচ্ছেও রয়েছে রাজ্য বিজেপির। সেই সূত্রেই শীর্ষ আদালতের আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা হবে। তাই এই সফর, এমনটাই সূত্রে খবর।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই ভবানীপুর আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় একপ্রকার নিশ্চিত। তাই বিজেপি যতোই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলুক না কেন, এই আসনে বিজেপির লড়াই কার্যত সম্মানের লড়াই হতে চলেছে। তার অন্যতম কারণ এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির অবস্থা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেমন অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। ঠিক সেইভাবেই নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে এখনও পর্যন্ত অনেকেই ফের তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আবার ইতিমধ্যেই কয়েকজন বিধায়ক গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘাসফুলে ফিরেও এসেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মুকুল রায়, তন্ময় ঘোষ, বিশ্বজিৎ দাসের মতো নেতা। যা ইতিমধ্যেই বঙ্গ বিজেপিকে চাপে রেখেছে। আবার অনেকে তো বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েই রেখেছন। বিধায়করা একে একে দলত্যাগ করায়, চাপে রয়েছে বিজপি।

ওয়াকিবহল মহলের মতে, সেই সূত্র ধরেই বলা যায়, ভবানীপুর কার্যত প্রেস্টিজ ফাইট হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির কাছে। এই আসনের ফলাফল থেকেই কার্যত পরিষ্কার হয়ে যাবে বঙ্গ বিজেপির ভবিষ্যৎ। তাই মনে করা হচ্ছে, এই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাও করতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে, এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না বঙ্গ বিজেপি।

এদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত স্বস্তিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখনই গ্রেফতার করা যাবে না তাঁকে। সোমবার এমনটাই জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মুহূর্ত রাজ্যের বিভিন্ন থানায় বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর সেই আবেদনের ভিত্তিতে, এদিন বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে শুনানি হয়। এদিন শুনানির পর আদালত জানিয়ে দেয় যে, কোনও মামলাতেই শুভেন্দু অধিকারীকে এখন গ্রেফতার করা যাবে না। এদিন আদালতের তরফে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, সিআইডি-র পাঠানো সমন নিয়ে এখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপও গ্রহণ করা যাবে না। এখানেই শেষ নয়, আরও বলা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যদি বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের হয়, সেই মামলার প্রেক্ষিতে কড়া পদক্ষেপ করতেও হাইকোর্টের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়েছে আদালত।

উল্লেখ্য, এদিন সিআইডি-র তলবে সোমবার ভবানী ভবনে বেলা ১১টা নাগাদ তাঁকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু, সেই হাজিরা তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, একটি ইমেল মারফত তিনি সিআইডি আধিকারিকদের জানিয়েছেন, দিনভর রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় ভবানী ভবনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। ২০১৮ সালে ১৩ অক্টোবর কর্মরত অবস্থায় কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে মাথায় গুলি লেগে শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় সুবিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা চক্রবর্তী। এই মামলারই তদন্ত করছে সিআইডি। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই শুভেন্দু অধিকারীকে এদিন ভবানী ভবনে তলব করা হয়।

এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর দিল্লি সফর ঘিরে আরও একটি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। আর সেটা হল, শুভেন্দু অধিকারীকে কি ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হবে? অবশ্য সেই আশঙ্কা দূর করেছেন খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফলে শুভেন্দু যে এই উপনির্বাচনে লড়তে নামছেন না সেটা স্পষ্ট।

বঙ্গ বিজেপির সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে এই ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্য একাধিক নাম শোনা যাচ্ছে। তবে, এক্ষেত্রে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দিলীপ ঘোষরা যে হেভিওয়েট প্রার্থী দেবেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তালিকায় যেমন নাম রয়েছে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের। শোনা যাচ্ছে, তথাগত রায়কে প্রার্থী করতে পারে বঙ্গ বিজেপি এই আসনে। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন দীনেশ ত্রিবেদীও। কারণ, ভবানীপুরে অনেক অবাঙালি ভোট রয়েছে। তাই দিনেশকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও রুদ্রনীল ঘোষও রয়েছেন এই তালিকায়।

উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। সেই রুদ্রনীলকেই ফের প্রার্থী করতে পারে গেরুয়া শিবির উপনির্বাচনেও। এছাড়াও ভারতী ঘোষ ও অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও শোনা যাচ্ছে। রাজ্য বিজেপির একটা সূত্রের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এমন কাউকে দল প্রার্থী করবে, যিনি সমানে সমানে টক্কর দিতে পারবেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ভোটে হারজিত থাকবেই। তবে, একুশের ভোটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্লা অনেকটাই ভারী। এই বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু, এই আসনে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও।