মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলছেনা পরিষেবা! প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করলেন মালদার অসহায় এই পরিবার

১২:২৩ পিএম, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলছেনা পরিষেবা! প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করলেন মালদার অসহায় এই পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ মালদাঃ তনুজ জৈনঃ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর জন্য যেখানে দুয়ারে সরকারের মতো ক্যাম্প করে রাজ্যের জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের সমস্ত জনগণ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসার পরিসেবা পান, সরকারি থেকে বেসরকারি নার্সিংহোমে তার জন্য ভোটের আগেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিতে মরিয়া প্রশাসন। সেখানে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ধরা পড়লো উল্টো চিত্র। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সরকারি থেকে বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেও চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত পিংকি দাস। চিকিৎসা না পেয়ে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন পিংকি দেবী। এমনই ছবি ধরা পরল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বারোডাঙ্গা গ্রামে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১নং ব্লকের অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পিংকি দাস। বয়স ২৪। স্বামীর অত্যাচারে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছেন বাবার বাড়িতে। মা পেশায় দিনমজুর, বাবা ভ্যান চালক এবং ভাই বিট্টু দাসও দিনমজুরের কাজ করে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হচ্ছে না অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা। অবশেষে চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবার। এমনকি চিকিৎসা না পেলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছে তারা। অসুস্থ মেয়ে এবং অসহায় দরিদ্র মা-বাবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও কাতর আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের মাধ্যমে। যেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফ্রি তে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। এদিকে নির্বাচনের মুখে এই ঘটনা কে ঘিরে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। জানা গেছে প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ পিংকি। মাথা এবং সারা শরীরে ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তার। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে তাদের।কিন্তু একমাস ধরে বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। অবশেষে আজ হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় অসহায় এই পরিবার। বাবার ভ্যানে করেই অসুস্থ পিংকি কে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে। সেখানে পিংকির মা লক্ষ্মী দাস অভিযোগ করেন। সাথে আবেদন জানান যাতে তার মেয়ের চিকিৎসা পায়। না তো তার সমগ্র পরিবার স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করবে। অন্যদিকে পিংকি দাস বলেন, তাঁর সারা শরীর এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। তাঁর স্বামী দেখেনা। এই পরিস্থিতিতে কিছু হয়ে গেলে ছোট দুই সন্তান অনাথ হয়ে যাবে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছিনা। মমতা সরকার তো সকলকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেয়। আমিও আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমি চিকিৎসা পায়। এপ্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, তাঁরা এই নিয়ে একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছেন তবে তাতে পরিষ্কার ভাবে কিছু নেই। বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে। আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী লিস্ট এর অন্তর্ভুক্ত সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলায় সমস্ত ব্যাপারটি জানানো হবে। এদিকে ভোটের সম্মুখে এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা রূপেশ আগারওয়াল বলেন, তৃণমূল সরকারের সম্পূর্ণটাই ভাওতাবাজি। কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এদিকে সংবাদমাধ্যম খুললেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রতিদিন উঠে আসছে। আজ হরিশ্চন্দ্রপুর বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।