মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

মাস প্রতি রোজগার মাত্র ৪৫০০! দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মহিলা হয়ে উঠলেন এই আশাকর্মী

০৪:৩৯ পিএম, নভেম্বর ৩০, ২০২১

মাস প্রতি রোজগার মাত্র ৪৫০০! দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মহিলা হয়ে উঠলেন এই আশাকর্মী

পেশায় তিনি এক আশাকর্মী। মাস প্রতি রোজগার মাত্র ৪৫০০ টাকা। তবু অসামান্য মনের জোর আর লড়াকু মনোভাবকে সঙ্গী করেই অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। নিজের কাজকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মহিলা৷ প্রতি বছর দেশের প্রভাবশালী মহিলাদের এক তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস ইন্ডিয়া। এবার সেই তালিকায় জায়গা করে নিলেন ওড়িশার সেই আশাকর্মী, মাতিলদা কুল্লু। ইচ্ছাশক্তির দ্বারা যে নিজের কাজকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মাতিলদা।

তাঁর লড়াইয়ের শুরু গ্রাম থেকেই। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার গর্গডবহল গ্রামে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মনে ছিল গভীর অন্ধবিশ্বাস। কালো জাদুর উপর প্রবল আস্তা ছিল তাঁদের। গ্রামবাসীদের মন থেকে সে অন্ধবিশ্বাস বের করা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। ওই গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝার কাছে যাওয়া বেশি কার্যকর বলে মনে করতেন গ্রামবাসীরা। এমনকি গ্রামের মধ্যে জাতপাত নিয়েও যথেষ্ট দ্বন্দ্ব ছিল।

এত বাধা সত্ত্বেও মাতিলদা হাল ছাড়েননি। যতই প্রতিকূলতা আসুক গ্রামবাসীদের সচেতন করতে উঠেপড়ে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। নিজে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম প্রথম যখন সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন, তখন বোঝা তো দূরের কথা তাঁর ওপরেই সবাই উত্ত্যক্ত হয়ে যেত। তবু নিজের ক্ষেত্র ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি তিনি। লড়াইটা তিনি চালিয়ে গিয়েছেন বহুদিন ধরেই। শুধু তাই নয়, করোনা কালীন আবহে মাসিক মাত্র ৪৫০০ টাকার বিনিময়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে টীকাকরনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সচেতন করে গিয়েছেন মাতিলদা। সারা ওড়িশা জুড়ে প্রায় ৪৭ হাজার আশাকর্মী থাকলেও একমাত্র মতিলদাই দায়িত্ব সহকারে সমস্ত দায়িত্ব সামলেছেন।

একা হাতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের কাজ থেকে শুরু করে, সদ্যজাতদের খোঁজ নেওয়া, স্তন্যপানের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো, ইত্যাদি নানা সচেতনতা মূলক কাজ করে গিয়েছেন মাতিলদা। বছরের পর বছর ধরে কোনও কোনও স্বার্থ ছাড়াই মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। অবশেষে মানুষের মন থেকে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণার অন্ধকার মুছে দিয়ে আলোয় ভরিয়ে দিয়েছেন নিজের আশেপাশের সমাজকে৷

https://twitter.com/IndiaToday/status/1465172083625926660

সামান্য পারিশ্রমিকেই এইভাবে দিন রাত এক করে পরিশ্রম করেই আজ তিনি আন্তর্জাতিক ফোর্বস ম্যাগাজিনে তুলেছেন নিজের নাম। আন্তর্জাতিক স্তরের ওই তালিকাটিতে ব্যাঙ্কার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী রসিকা দুগ্গলের মতো প্রভাবশালী মহিলাদের পাশাপাশিই একজন সাধারণ আশাকর্মী হয়ে কঠিন লড়াই জিতে নিজের স্থান পাকা করে নিয়েছেন মাতিলদা। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত গোটা দেশ।