মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সাড়ে ৬ ফুটের ছোট্ট বাক্স! তার ভিতরে বসেই চা বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছেন এই বৃদ্ধ

০১:২৮ পিএম, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১

সাড়ে ৬ ফুটের ছোট্ট বাক্স! তার ভিতরে বসেই চা বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছেন এই বৃদ্ধ

দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করার জন্য মানুষকে যে কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তা হয়তো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন! অর্থ উপার্জনের জন্য দিনরাত এক করে খাটনি তো রয়েছেই, সঙ্গে হয়তো মাথা গোঁজার জন্যও ঠিক মতো জায়গা মেলে না। তাই কখনও ফুটপাতে আবার কখনও টায়ার বা বাস্কের মধ্যেই দিন কাটাতে হয় দুঃস্থ মানুষগুলিকে। সেরকমই আরেকজন হলেন আসানসোলের ষাটোর্ধ্ব এক চা ব্যবসায়ী গৌরীশঙ্কর জয়সওয়াল। তিনি নিজের সংসার পেতেছেন ছোট্ট এক বাক্সের মধ্যে। সেখানেই কাটিয়ে দিলেন জীবনের দু’দশক।

মাত্র ৩ ফুট বাই ৬ ফুটের এক কাঠের বাক্স। আর সেখানেই শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বসবাস করেন তিনি। সেই বাক্সের মধ্যেই চলে থাকা-খাওয়া সহ দোকানদারি, কেনাবেচা। দীর্ঘ ১২ এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তাঁর জীবনের এক মাত্র সম্বল যেন ওই বাক্সটি। জানা গিয়েছে, তাঁর আসল বাড়ি বিহারের ভাগলপুরে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে সেই বাড়ি ছেড়ে আসানসোলে এসেছিলেন তিনি। প্রথম প্রথম শ্রমিকের কাজ শুরু করলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। এরপরই তিনি চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু সেখানেও ভাগ্যের কী পরিহাস! যতবার ওই বৃদ্ধ চায়ের দোকান বসিয়েছেন ততবারই ইস্কো কর্তৃপক্ষ পুরনিগম সেই দোকান ভেঙে ফেলেছে। তারপর থেকে বাস্ককেই নিজের বাসস্থান ও দোকান বানিয়ে ফেলেছেন গৌরীশঙ্কর। বর্তমানে আসানসোলের বার্ণপুর বাসস্ট্যান্ডে ওই বাক্সতেই কেটে যায় তার সকাল থেকে রাত। সকাল হলেই দোকানে বাড়ে ভীড়। ধোঁয়া ওঠা চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে আসেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা। সারাদিন বিক্রিবাটার শেষে রাত গড়ালে ওই বাক্সের মধ্যে শুয়েই রাতের ঘুমে ডুবে যান বৃদ্ধ।

উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকার বা রাজ্য সরকারের তরফে এত প্রকল্প থাকলেও গৌরী বাবু কিন্তু কোনওদিন কোনও প্রকল্পই পাননি। কোনো রাজনীতিবিদও তাঁর খোঁজ নেয়নি বা সাহায্য করেনি। চিরটাকাল আড়ালেই থেকে গিয়েছেন গৌরীশঙ্কর। তবে বৃদ্ধের মনে কিন্তু কোনও ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই। জীবনের প্রায় অর্ধেক অংশ বাস্কের কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতেও তিনি খুশি। এভাবেই আগামী দিনগুলিও কাটাতে চান।