মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

দ্রুত উপনির্বাচনের দাবিতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর আশাবাদী তৃণমূল! পাল্টা বিজেপি তুলল এই প্রশ্ন

০৯:২৪ পিএম, জুলাই ১৫, ২০২১

দ্রুত উপনির্বাচনের দাবিতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর আশাবাদী তৃণমূল! পাল্টা বিজেপি তুলল এই প্রশ্ন

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলা ক্রমশ সুস্থতার পথে। এই মুহূর্তে বাংলার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাড়ছে সুস্থতার হার। এই পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনের পক্ষে ফের সওয়াল করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এদিনই রাজ্যে দ্রুত উপনির্বাচনের দাবিতে এদিনই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনেও একই আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। দিল্লিতে আজ নির্বাচন কমিশের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর, রাজ্যে উপনির্বাচন নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এই দলে ছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও'ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সাত বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হোক সাত দিন প্রচারের সময় দিয়ে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে এমনটাই দাবি জানিয়েছে তৃণমূল।

আজ ভবানীপুর-সহ ৭ কেন্দ্রে দ্রুত উপনির্বাচন করানোর দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল মন্তব্য করে যে, ‘আমরা নিরাশ নই, আশা নিয়ে যাচ্ছি।’ তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বক্তব্য, উপনির্বাচন করানো নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা ফলপ্রসূ। জানা গিয়েছে যে, কমিশনের তরফে তৃণমূলের দাবি-দাওয়া শোনা হয়েছে। একই সঙ্গে পালটা কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথাও উল্লেখ করেছে কমিশন। তবে, সবশেষে আইন মেনে সময়ের মধ্যেই উপনির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে আশা করছেন রাজ্যের শাসক নেতৃত্ব।

সূত্রের খবর, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র-সহ তাঁর গোটা টিমের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেন তৃণমূল নেতারা। বেরিয়ে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ যে তলানিতে এসে ঠেকেছে সেটা আমরা তথ্য দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, রাজ্যের মানুষ ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন। এটা করতে প্রচারের জন্য যদি অল্প সময় ধরে রাখা হয় তাতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও আপত্তি নেই।’

এদিন বৈঠকের পর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, ‘আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল, রাজ্যে সাতটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন কবে হবে তাই নিয়ে। বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল, তখন করোনার পজিটিভ রেট ছিল ৩০ শতাংশ, বর্তমানে যা নেমে এসেছে ১.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। রাজ্যের মানুষের প্রত্যাশা, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’

তবে, উপনির্বাচন নিয়ে রাজ্যের শাসকদলের এই দ্রুততা মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছে না রাজ্যের গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচনের পক্ষে এদিন ফের সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, উপনির্বাচনের আগে পুরভোটের দাবি জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, ৬ মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করা উচিত। বেআইনি কিছু দাবি করছি না আমরা। বিজেপি ভয় পাচ্ছে, কারণ ওরা জানে সব নির্বাচনে হারবে। ওঁরা মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে ভাষণ বন্ধ করুক।’

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি এখনই উপনির্বাচন চায় না, তার সবথেকে বড় কারণ, একুশের হারের বিপর্যয় সামলে, এখনই উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি বিজেপির নেই। কিন্তু সরাসরি এই কথা না বললেও, অন্য যুক্তিতে উপনির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। বিজেপি নেতাদের মূল দাবি, পুরভোট স্থগিত রেখে শাসকদল উপনির্বাচন চাইছে কোন যুক্তিতে? রাজনৈতিক মহলের মত, রাজ্যে ১১২ টি পুরসভায় ভোট বাকি। যে অঞ্চলগুলিতে পুরভোট এখনও বাকি তার কিছু কিছু অংশে বিজেপির জোর বেশি রয়েছে, বিশেষত উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি জায়গায় তাদের পাল্লা ভারি। উপনির্বাচনে ফের হারের ভয় যেমন আছে, ঠিক তেমনই পুরভোটের মাধ্যমে কিছুটা হারানো জমি উদ্ধারের সম্ভবনাও রয়েছে। তাই এই সুযোগে যদি গোটা ভোটের বিষয়টা যদি কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে দলেরই লাভ হবে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য এদিন উপনির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের কোনো নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু এতগুলো পুরসভায় ভোট বাকি থাকতে কেন উপনির্বাচন নিয়ে মাথাব্যাথা তৃণমূলের?’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যের ৫ টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন এবং দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে সাতটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এদিকে রাজ্য প্রশাসন যে, উপনির্বাচনের জন্য সবরকমভাবে প্রস্তুত, তা আগেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই এখন রাজ্যে উপনির্বাচন করানো যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীও তেমনটাই চাইছেন, যাতে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

যে কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন বাকি, তার মধ্যে রয়েছে ভবানীপুর কেন্দ্রও৷ ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গত ২১ মে পদত্যাগ করেছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হওয়ায়, শপথ গ্রহণের ছ’মাসের মধ্যে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে৷ এই কেন্দ্র ছাড়াও খড়দহ, দিনহাটা, শান্তিপুর এবং গোসাবা কেন্দ্রে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে৷ আর খড়দহে ফলাফল ঘোষণার আগেই প্রয়াত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। সেই আসনে আবার তৃণমূল প্রার্থী হবেন শোভনদেব। আর শান্তিপুর ও দিনহাটা থেকে জিতে ইস্তফা দিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। অন্যদিকে, গত জুন মাসে প্রয়াত হয়েছেন গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। এছাড়াও প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে ভোট হয়নি জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জে। তাই এই সব আসনে সাত দিনের প্রচারের সময়সীমার মধ্যেই ভোট করানোর পক্ষে তৃণমূল কংগ্রেস।

ভবানীপুর, খড়দহ, গোসাবা, দিনহাটা, শান্তিপুর– এই কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন এছাড়া রাজ্যসভারও দুটি আসনেও ভোট রয়েছে। নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কোনও একটি আসন থেকে ৬ মাসের মধ্যে জিতে আসা জরুরি সাংবিধানিক স্বার্থেই। ফলে, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির খানিকটা ভালোর দিকে যেতেই, রাজ্যে উপনির্বাচনের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল তৃণমূল। এর আগে চিঠি লিখে এই দাবি জানিয়েছিল রাজ্যের শাসকদল। আর বৃহস্পতিবার সরাসরি দিল্লিতে কমিশনের দফতরে গিয়ে দেখা করলেন তাঁরা। তবে, তৃণমূল তাড়াতাড়ি উপনির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করলেও, ক্রমাগত এর বিরোধিতা করছে গেরুয়া শিবির।