বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কি প্রতিশোধের রাজনীতি হচ্ছে? কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস?

০৬:০০ পিএম, জুন ২২, ২০২১

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কি প্রতিশোধের রাজনীতি হচ্ছে? কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস?

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলার ক্ষমতা দখল করতে না পেরেই, প্রশাসনকে নানাভাবে বিপাকে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র সরকার। প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের রাজনীতি করছে কেন্দ্র সরকার। মঙ্গলবার প্রাক্তন মুখ্যসচিবের পাশে দাঁড়িয়ে এই দাবিই করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

উল্লেখ্য, আগেই মুখ্য সচিবের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাও মিটছে না আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্রের টানাটানি। আবারও একবার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চিঠি দিয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পিছু হটতে কোনও মতেই রাজি নয় কেন্দ্র সরকার।

সোমবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে ফের কড়া চিঠি ধরিয়েছে কেন্দ্র সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে, তাঁকে চিঠি ধরিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ দপ্তর (DOPT)। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে চিঠির জবাব দিতে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন দলের তরফ থেকে সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘কোভিড-১৯ সঙ্কট নিয়ে কাজ করছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলল। সৎ আমলাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’

https://www.facebook.com/AITCofficial/videos/804996350149324

কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতর প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ বলে মনে করিয়ে এদিন সৌগত রায় বলেন যে, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এটা হচ্ছে। নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন আচরণ করছে কেন্দ্র।’ তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিমান অবতরণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সে কারণে বৈঠকে দেরি হয়েছিল তাঁর এবং মুখ্যসচিবের। প্রধানমন্ত্রীকে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উপরন্তু আলাপনের বদলির নির্দেশিকায় পদের উল্লেখ ছিল না। কেন্দ্রের একটাই উদ্দেশ্য, রাজ্য সরকারের অফিসারদের বিচলিত করা। যাতে তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। আলাপন কী করবেন, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। আমরা দলের তরফে প্রতিবাদ জানালাম।’

অন্যদিকে, বাঙালি অফিসারকে অপদস্থ করা হলে বাংলার মানুষ মেনে নেবে না বলেও, এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখছে, সৎ, দক্ষ বাঙালি অফিসারকে অপমানের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। বাইরে থেকে বাঙালি অফিসারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা সহ্য করবে না বাংলার মানুষ।’

এদিকে, অবসরের পর কীভাবে আলাপনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ও। তিনি বলেন, ‘বাংলার প্রশাসনকে দুর্বল করাই ওদের একমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অবসরের পর আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ থাকলেই, বিভাগীয় তদন্ত করা যায়। চিঠিতে উল্লিখিত ধারাগুলি কর্মরত আইএএস অফিসারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে খাটে না। যত দ্রুত সম্ভব নোংরামি বন্ধ হোক।’

এদিকে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে কেন্দ্রের পাঠানো চিঠির জবাব দিতে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই চিঠিতে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে উপস্থিত না থাকায়, তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছে। চিঠিতে এও স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, উল্লেখ করে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে, আলাপনকে না জানিয়েই, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, লিখিতভাবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন আলাপন। অথবা সশরীরে উপস্থিত হয়েও, তিনি নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন। কিন্তু চিঠির উত্তর না পেলে, সর্বভারতীয় প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার (অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস) ৮ এবং ৬ নম্বর বিধি অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে, যার আওতায় অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন তিনি। তাই আবশ্যিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তিনি মানছেন, নাকি অস্বীকার করছেন তা তাঁকে জানাতেই হবে। তাছাড়া, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চিঠির উত্তর না দিলে, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে আলাদা করে তদন্ত হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারেও বলে জানা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত মাসেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে বিস্তর টানাপড়েন চলে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে, তাঁকে শোকজ নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। যে চিঠির জবাবও দেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও বিতর্ক মেটেনি। শেষমেশ আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবসরের দিন অর্থাৎ ৩১ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ১ জুন থেকে আগামী তিন বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে কাজ করবেন তিনি। মমতা বলে দেন, ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড’। এতো কিছুর পরেও যে, সহজে এই সমস্যা মিটবে না, তা ফের সোমবার বুঝিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। আর তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্য সরকারও এতো সহজে হাল ছাড়তে রাজি নয়, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্যুতে।