বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

১০০ বছর পেরোলেই গাছে আসে ফুল! বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নজর কাড়ছে বিরল ‍‍`সেঞ্চুরি পাম‍‍`

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২২, ০২:৩২ পিএম | আপডেট: মে ১৮, ২০২২, ০৮:৩২ পিএম

১০০ বছর পেরোলেই গাছে আসে ফুল! বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নজর কাড়ছে বিরল ‍‍`সেঞ্চুরি পাম‍‍`
১০০ বছর পেরোলেই গাছে আসে ফুল! বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নজর কাড়ছে বিরল ‍‍`সেঞ্চুরি পাম‍‍`

সেঞ্চুরি পাম! সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেই গাছটিতে আসে ফুল। আর সেঞ্চুরির অভিনন্দনের মধ্যেই নীরবে ঘটে প্রস্থান। কারণ গাছে ফুল আসা মানেই তার মৃত্যুর সময় আগত। এমনই বিরল এই গাছ নজর কাড়ল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ চত্বরে একটি সেঞ্চুরি পাম গাছে ধরেছে ফুল। যা দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন উৎসুকরা।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে যে পরিখা রয়েছে, সেই পরিখার চারিদিকে বেশ কয়েকটি সেঞ্চুরি পাম গাছ রয়েছে। অনুমান করা হয়, বর্ধমানের রাজ পরিবারের তরফে এই গাছ রোপণ করা হয়েছিল। তারই মধ্যে একটি গাছে এবার ফুল ধরেছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কেন্দ্রের দিকে গেটের পাশেও একটি সেঞ্চুরি পাম গাছ ছিল। তবে বেশ কয়েক বছর আগে ওই গাছে ফুল আসার পরই গাছটি মারা যায়। এবার ফের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আরেকটি গাছে ফুলের দেখা মেলায় তুমুল উৎসাহ গড়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বা শিক্ষক-কর্মীরা ছাড়াও আশেপাশের অনেকেই আসছেন ওই গাছের ছবি তুলতে।

কথিত রয়েছে, সেঞ্চুরি পাম গাছটিতে ১০০ বছর পর ফুল আসে। তারপরেই ধীরে ধীরে গাছটি মারা যায়। ফুল আসার বছর দুয়েকের মধ্যেই গাছটির মৃত্যু হয়। এই গাছের উচ্চতা লম্বা তাল গাছের মতোই। পাম ট্রি বা তাল গাছের আদি সংস্করণ এটি। উদ্ভিতবিদরা জানাচ্ছেন, মূলত পশ্চিমঘাট পর্বতলালায় এই গাছ দেখা যায়। জলা জায়গায় এই গাছ বেশি হয়।

এই বিরল এই গাছ নিয়ে সচেতন হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। এই গাছ নিয়ে গবেষণার দাবিও তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। এই প্রসঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বটানি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক জগৎপতি তা বলেন, এই গাছ যে ১০০ বছর পরে ফুল দেয় এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। তবে বহু দশক পরেই এই গাছে ফুল আসে। সেটা প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ চত্বরে বেশ কয়েকটি এই গাছের দেখা মেলে। অতীতে এই গাছ নিয়ে গবেষণার চেষ্টা হয়। কিন্তু তা সম্পূর্ণ করা যায়নি। গাছটিকে নিয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং গবেষণার প্রয়োজন। কারণ এই গাছ খুবই বিরল।

পরিবেশবিদ অপূর্বরতন ঘোষ জানান, এই গাছ যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রয়েছে সেটাই অনেকে জানেন না। তাঁদের জানানো এবং গবেষণায় উৎসাহিত করতে হবে। নাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই গাছের অস্তিত্বই মুছে যাবে।

একই সুর শোনা গেল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের প্রধান শিখা দত্ত সেনগুপ্তের মুখেও। তাঁর কথায়, যে গাছের ফুল এতো দেরিতে আসে তাদের প্রজাতি রেখে যাওয়ার ক্ষমতাও কম হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই কারণেই এই গাছ কমছে। কিন্তু এই গাছ নিয়ে গবেষণার জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না। আমরা এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করে দেখব, গাছগুলিকে কিভাবে রক্ষা করা যায়। নাহলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।