বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

হাওড়া ব্রিজের জানা অজানা ইতিহাস

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২, ১০:১৭ পিএম | আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৫:২১ এএম

হাওড়া ব্রিজের জানা অজানা ইতিহাস
হাওড়া ব্রিজের জানা অজানা ইতিহাস

হাওড়া ব্রিজ! বাংলা ও বাঙালির অহঙ্কার। পৃথিবীর ষষ্ঠ ঝুলন্ত সেতু রয়েছে আমাদের এই সাধের কলকাতায়। কিন্তু কি জানেন, এই হাওড়া ব্রিজের পিছনের লুকিয়ে আছে এক অন্যরকম ইতিহাস, যা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কিছুটা সময়।


ব্রিটিশ শাসনে কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া জেলা ছিল ইংরেজদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল জায়গা। যেখান থেকে সবরকম কাঁচামাল একজায়গা থেকে অন্যজায়গায় সরবরাহ হত। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল এত মাল নদীর উপর দিয়ে বহন করা  শুরু হল আলোচনা, প্রায় বছরখানেক পর ১৮৭১ নাগাদ প্রথম ভাসমান সেতু অর্থাৎ পন্টুন ব্রিজ চালু হল। লম্বায় ১৫২৮ ফুট, ৪৮ ফুট চওড়া। দু’পাশে সাত ফুটের  ফুটপাত। জাহাজ-স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফুট খুলে দেওয়া যেত। স্টিমার এলেই সেতু বন্ধ। ভোঁ ভোঁ শব্দ করে স্টিমার পেরিয়ে যাবে, তার পর আবার খুলবে সেতু। পুরনো হাওড়া ব্রিজের নকশা বানিয়েছিলেন স্যর ব্র্যাডফোর্ড লেসলি। ব্রিটিশ শাসনে রেল কোম্পানির খ্যাতনামা ইঞ্জিনিয়ার। এ দেশের বড় বড় রেলসেতুর নকশা‌ও তাঁর‌ই বানানো।


১৮৭১ সালে বাংলার ছোট লাট যখন ‘হাওড়া ব্রিজ অ্যাক্ট’ তৈরি করেছিলেন, তখনই সেতু পেরোতে টোল বসানো হয়েছিল। টোলের টাকাতেই চলত সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।সেতু থেকে সর্বমোট টোল আদায় হয়েছিল ৩৪ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। বছরে কমপক্ষে দেড় লক্ষ টাকা টোল আদায় হয়েছে সে সময়। ’
সে সময় পন্টুন ব্রিজ তৈরি করতে লেসলি সাহেবের সংস্থাকে দিতে হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা।

 

তবে ভাসমান সেতুর সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জাহাজ-স্টিমার যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। জাহাজ গেলেই গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু বন্ধ হয়ে যেত। যানজটের বহরও বাড়ত দিনের বেশির ভাগ সময়। কারণ, দিনের বেলাতেই কেবলমাত্র সেতু খোলা যেত। এই ব্যবস্থা চলে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত। তার পর রাতেও জাহাজের জন্য সেতু খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। তাতে আগে যেখানে দিনে ২৪ বার সেতু খুলতে হত, তা কমে যায়। দিনে মাত্র চার বার সেতু খুললেই কাজ মিটে যেত। বন্দরের নথি বলছে, ১৯০৭-০৮ সালে হাওড়া ব্রিজের মাঝখান দিয়ে ৩০২০টি জাহাজ-স্টিমার-লঞ্চ গিয়েছিল।

 

তবে রাতে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা হলেও যানজটের সমাধান হচ্ছিল না। ফলে সে সময় থেকেই হাওড়াতে একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে ব্রিটিশ প্রশাসন। ১৯০৬ নাগাদ আবার নতুন করে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হল । প্রাথমিক কমিটি গঠনের পর ১৯১১ সালে নতুন হাওড়া সেতু নির্মাণের নকশা চাওয়া হয়। পরের বছর সারা বিশ্ব থেকে ৯টি সংস্থা ১৮টি নকশা জমা দেয়। কিন্তু সব ক’টি নকশাই ছিল বাসকুল মডেলে। অর্থাৎ সেতুর মাঝ বরাবর খোলা রাখার ব্যবস্থা রেখেছিল সব সংস্থাই। এর মধ্যে এসে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশরা নতুন কোনও পরিকাঠামো প্রকল্প থেকে সরে আসে।

 

১৯১৭ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত যুদ্ধের কবলে পড়ে অর্থনীতিও ধাক্কা খায়। এ দেশে আমদানি কমতে থাকে। ফলে নতুন করে কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ব্রিটিশ প্রশাসন। ১৯২১ সালে ফাইল ঝেড়ে ফের চর্চা শুরু হয়। কেটে গেল ৩০ টা বছর তারপর ১৯৩৫ নাগাদ শুরু হলো সেতু নির্মাণের কাজ। দায়িত্ব দেওয়া হলো ব্রাথ ওয়েইটব্রান এন্ড জোসেফ নামক একটি কোম্পনিকে। ইস্পাত সরবরাহ করে  টাটা স্টিল আর লাইট আসে ফিল্পিস কোম্পানি থেকে।শেষমেশ প্রায় আট বছর পর ১৯৪৩ সালে প্রথম তৈরি হলো ভারতের ক্যান্টিলিভার ব্রিজ। পরবর্তীকালে ১৯৬৫ নাগাদ এই সেতুর নাম নোবেলজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুযায়ী রবীন্দ্র সেতু রাখা হয়।। নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানিয়ে ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন এই ব্রিজের নাম বদলে হয় রবীন্দ্র সেতু। যদিও পরিচিত হাওড়া ব্রিজ নামেই। ‌‌