বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

১৩ বছরেই তাক লাগানো সাফল্য! লাদাখের দুর্গম দুই চূড়া জয় করে ইতিহাস নবম শ্রেণীর ছাত্রের

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২২, ০৩:৫৯ পিএম | আপডেট: জুলাই ২৮, ২০২২, ১০:৩২ পিএম

১৩ বছরেই তাক লাগানো সাফল্য! লাদাখের দুর্গম দুই চূড়া জয় করে ইতিহাস নবম শ্রেণীর ছাত্রের
১৩ বছরেই তাক লাগানো সাফল্য! লাদাখের দুর্গম দুই চূড়া জয় করে ইতিহাস নবম শ্রেণীর ছাত্রের

হায়দ্রাবাদের এক স্কুলের নবম শ্রেণীতে পাঠরত বিশ্বনাথ কার্তিকেয়। বয়স মাত্র ১৩ বছর। আর এই বয়সেই সে এমন কীর্তি করে দেখালো যা অনেকে কল্পনাও করতে পারবেন না। লাদাখের দুর্গম দুটি পর্বতের চূড়া জয় করে অনন্য নজির গড়ল এই কিশোর। তাঁর সাফল্যে আজ উচ্ছ্বসিত দেশবাসী৷ জানাচ্ছেন কুর্নিশও।

লাদাখের মার্খা উপত্যকায় অবস্থিত কাং ইয়াৎজে এবং জংগো (Kang Yatse and Dzo Jongo) পর্বতশ্রেণীতে আরোহণ করে ইতিহাস গড়েন কার্তিকেয়। গত ৯ জুলাই কাং ইয়াতসে এবং জংগোতে ট্রেকিং শুরু হয় তার। গত ২২ জুলাই শেষ হয় ট্রেক। যদিও বেস ক্যাম্প থেকে চূড়া পর্যন্ত এই ট্রেক একেবারেই সহজ ছিল না। এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নবম শ্রেণীর এই ছাত্র জানায়,  “আমাদের যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। বেস ক্যাম্প থেকে যখন আমরা ক্র্যাম্পন পয়েন্টে পৌঁছেছিলাম, তখন প্রবল ঠাণ্ডা আর ঝোড়ো হাওয়া। সেইসঙ্গে বাতাসের চাপ কমে যাওয়ায় আরও কষ্ট হচ্ছিল। ওই খারাপ আবহাওয়ায় আমাদের এই ট্রেকিং শেষ করতে পারব কিনা তা বেশ চিন্তার বিষয় ছিল। তবে আমরা হাল ছেড়ে দিইনি। এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। তাই আজীবন স্মরণীয় করা রাখতে চেয়েছিলাম। অবশেষে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।"

এই ট্রেকের আগে আরও বেশ কয়েকটি ট্রেকে গেলেও কপালে জুটেছিল কেবলই ব্যর্থতা। রাশিয়ার গঙ্গোত্রী এবং মাউন্ট এলব্রাসের কাছে রুদুগাইরা পর্বতের ট্র্যাকটি সম্পূর্ণ্ব করতে পারেনি কার্তিকেয়। কিন্তু এই ব্যর্থ প্রচেষ্টাই ছিল তার কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। এবার অবশেষে শিখর ছুঁয়েই ফেলল নবম শ্রেণীর এই পড়ুয়া। তার কৃতিত্ব অবশ্য সে দিয়েছে নিজের গাইডদের। তাদের প্রশংসয় কার্তিকেয় জানায়, “ভরত ও রোমিলকে ধন্যবাদ! ওদের জন্যই আমি এই অভিযানে সাফল্য পেয়েছি।”

১৩ বছরের এই ছাত্র আরও জানায়, “মা-ই আমার অনুপ্রেরণা। মা সব সময় আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। এই অভিযানে মা আমার জন্য পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সব খাবার রান্না করে দিয়েছিল। এতে পর্যাপ্ত চর্বি, কার্বোহাইড্রেট, শাকসবজি এবং ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন আমার বর্তমান লক্ষ্য মাউন্ট এভারেস্ট এবং ‍‍`সেভেন সামিট‍‍` আরোহণ করা।" 

এদিকে কার্তিকেয়-র এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার থেকে প্রতিবেশীরাও। ছেলের সাফল্যে বেজায় খুশি মা কার্তিকেয়-র মা লক্ষ্মী। এএনআইকে তিনি জানান, “আমি রাস্তা পার হতেও খুব ভয় পেতাম কিন্তু আজ আমার ছেলে এত উচ্চতায় পৌঁছাল, আমি ওকে নিয়ে গর্বিত বোধ করছি। আমার আবেগকে ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। ছেলেকে রোজ ভোর ৫টায় ঘুম থেকে তুলে জিমে নিয়ে যেতাম আমরা। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে ও বাড়ি ফিরে তারপর স্কুলে যেত।”

ভাইয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দিদি বৈষ্ণবীও। তিনি বলেন, “ছোট থেকে ভাইয়ের চেষ্টা থাকলেও অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ও হাল ছাড়েনি। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ভাই তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম। ওর সাফল্য দেখে খুবই ভাল লাগছে।" কার্তিকেয়কে নিয়ে আশাবাদী কোচ ভরতও। আপাতত ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা কার্তিকেয়-র।