মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

হুইলচেয়ারে ৩০০ কিমি পাড়ি! মুসলিম শিক্ষিকার মঙ্গলকামনায় শবরীমালায় পুজো দেবেন কেরালার যুবক

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২২, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৫:২০ এএম

হুইলচেয়ারে ৩০০ কিমি পাড়ি! মুসলিম শিক্ষিকার মঙ্গলকামনায় শবরীমালায় পুজো দেবেন কেরালার যুবক
হুইলচেয়ারে ৩০০ কিমি পাড়ি! মুসলিম শিক্ষিকার মঙ্গলকামনায় শবরীমালায় পুজো দেবেন কেরালার যুবক

ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই এই বিশ্বে। ধর্ম নিরপেক্ষে মানুষের কল্যাণে পাশে থাকা, একে অপরের মঙ্গলকামনাই আসল মনুষ্যত্ব। সে কথাই ফের প্রমাণ করব দেখালেন কেরালার এক বিশেষভাবে সক্ষম যুবক। হুইলচেয়ারে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন কান্নান। যাচ্ছেন বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে। দেবতা আয়াপ্পার বিপদের দিনে পাশে থাকা মুসলিম শিক্ষিকা শমিরার মঙ্গলকামনায় চলেছেন তিনি।

কেরলের মাল্লাপুরম জেলা থেকে শবরীমালা মন্দির, ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে ঠিক ১২ দিন। পামপা নদী তীরে পৌঁছানোর পর কাজে আসবে না হুইলচেয়ার। এরপর পাহাড় চড়ে দেবতার আয়াপ্পার মন্দির পৌঁছবেন বিশেষ ভাবে সক্ষম আমগাত্তুচালিল কান্নান।

২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর, লরি থেকে ভারী গাছের গুড়ি নামাতে গিয়ে অন্ধকার ঘনায় পেশায় দিনমজুর কান্নানের জীবনে। দুর্ঘটনায় একটি পা বাদ যায়। অন্য পা প্যারালাইজ হয়। মুহূর্তে বদলে যায় কর্মঠ মানুষটার জীবনের গ্রাফ। এরপর থেকে ভরসা হয় হুইলচেয়ার। কাজকম্ম বন্ধ হয়।

এই অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখনই পাশে দাঁড়ান কনডোট্টির সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপিকা শমিরা। যিনি জাতীয় সার্ভিস স্কিমের কোঅর্ডিনেটরও। শমিরার উদ্যোগেই মাথার উপর ছাদ তৈরি হয়। বাড়ি হয় যুবকের। এবার তাই শিক্ষিকা শমিরার মঙ্গলকামনায় হুইলচেয়ারে শবরীমালায় পাড়ি দিয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম কান্নান।

বর্তমানে কান্নানের স্ত্রী একটি হোটেলে সাফাই কর্মীর কাজ করেন, মেয়ে প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না তিনি নিজে। তবে সম্প্রতি লটারির টিকিট বিক্রি করা শুরু করেছেন। মোটের উপর চলে যাচ্ছে জীবন। যার জন্য অধ্যাপক শমিরার প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি।

যুবক জানিয়েছেন, বারো দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা অবধি যাত্রা করবেন। এরপর বিশ্রাম নেবেন কোনও মন্দিরে অথবা বিশ্রামালয়ে। ফের সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১১টা অবধি যাত্রা করবেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পৌঁছবেন নদী তীরে। তারপর হুইলচেয়ার থেকে নেমে পাহাড় চড়ার পালা।

কান্নানের কথায়, “শিক্ষিকার জন্যই তাঁর জীবনে পরিবর্তন হয়েছে। উনি আমার ও পরিবারের কাছে ঈশ্বরের সমান। আমি আয়াপ্পার একনিষ্ঠ ভক্ত। এই যাত্রা শিক্ষিকার জন্যই। আমার স্থির বিশ্বাস প্রার্থনায় আয়াপ্পা সাড়া দেবেন, শিক্ষিকাকে আশীর্বাদ করবেন।” অন্যদিকে অধ্যাপিকা শমিরা বলেন, “চার বছর আগে ওঁকে বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করেছিলাম। এখনও বৃষ্টি হলেই আমাকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানান।”