বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

নাবালিকাকে অকথ্য অত্যাচার সৎ মায়ের! পুলিশি তৎপরতায় উদ্ধার নির্যাতিতা, ঠাঁই পেলেন চাইল্ড হোমে

চৈত্রী আদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২২, ০৫:৫০ পিএম | আপডেট: মে ২০, ২০২২, ১১:৫৮ পিএম

নাবালিকাকে অকথ্য অত্যাচার সৎ মায়ের! পুলিশি তৎপরতায় উদ্ধার নির্যাতিতা, ঠাঁই পেলেন চাইল্ড হোমে
নাবালিকাকে অকথ্য অত্যাচার সৎ মায়ের! পুলিশি তৎপরতায় উদ্ধার নির্যাতিতা, ঠাঁই পেলেন চাইল্ড হোমে

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও মানুষের নৈতিক অধঃপতন অব্যাহত। সমাজ নামেই উন্নত হচ্ছে। এই সমাজেই এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা আজও কন্যা সন্তানকে মান্যতা দেয় না। ফলস্বরূপ দিনের পর‌ দিন অত্যাচারের শিকার হতে হয় পরিবারের মেয়ে সন্তানদের। এবার এমনই এক নিকৃষ্ট ঘটনার নিদর্শন মিলল রাজ্যে।

মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর অঞ্চল থেকে উঠে এসেছে দশ বছরের এক নিগৃহীতার কথা। অভিযোগ, দিন-রাত তাঁর ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাতেন সৎ মা। মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই তাঁর একমাত্র ‘অপরাধ’। নাবালিকার ওপর এই অত্যাচারের কথা প্রতিবেশীরাও জানতেন। অবশেষে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে কিশোরীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরাই। তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান থানায়। পরে পুলিশের সাহায্যে নাবালিকাকে পাঠানো হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা কিশোরী মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কিসমত বড়োল গ্রামের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে মাকে হারান ছোট্ট মেয়েটি। মায়ের মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই বাবা প্রদীপ দাস আবার একটি বিয়ে করেন। এরপরই তাঁর জীবনে তৈরি হয় আতঙ্কের বাতাবরণ।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত কুমার দাস জানান, “বাচ্চা মেয়েটির ওপর খুব অত্যাচার চলছিল। মেয়েটির বয়স মাত্র দশ বছর। মেয়েটির ওপর প্রচন্ড অত্যাচার হওয়ায় আমরা সেখানে যাই এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বারবার বোঝালেও সুরাহা হয়নি। তারপরই আমরা থানার দ্বারস্থ হই”। এছাড়াও তাঁর সংযোজন, “মেয়ে হওয়াটাই একটা অপরাধ হয়ে গেছে ওই কিশোরীর। যদি ছেলে থাকত তাহলে তার ওপর হয়তো এতটা অত্যাচার হত না। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য তার ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়।”

পুলিশের সাহায্যে অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পান কিশোরী। এই ঘটনায় এলাকাবাসীরা ফের একবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশের মানবিক রুপ দেখল। থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের তত্ত্বাবধানে কিশোরীর যাবতীয় যত্ন-আত্তি করা হয়। তাঁকে স্নান করিয়ে, খাবার খাইয়ে নতুন জামাও দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে রেখে আসা হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে। পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এই প্রসঙ্গে সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, “গ্রামবাসীদের একটা অভিযোগ পেয়েছি। নাবালিকা মেয়েটির খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। মেয়েটিকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বর্তমানে কন্যা সন্তানের স্বীকৃতি নিয়ে দেশজুড়ে প্রচার চলছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনও এই বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু এই প্রচার মানুষের কাছে আদৌ কতটা পৌঁছচ্ছে সেই নিয়ে ধন্দ রয়েই গিয়েছে। কারণ প্রায়শই এই ধরনের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে। বর্তমান দিনে মেয়েরা যেমন আকাশে বিমান ওড়াচ্ছে তেমন এভারেস্টও জয় করছে। ছেলে হোক বা মেয়ে, প্রতিটি সন্তানই যে সমান, একথা প্রত্যেকের মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী।