বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‘এরা কি মানুষ? এতো খারাপ আমি দেখিনি…’, মেয়ের ভয়াবহ পরিণতি দেখে অসহায় বাবার বিলাপ

আত্রেয়ী সেন | মলয় দে

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২২, ১০:৫২ পিএম | আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২২, ০৫:২২ এএম

‘এরা কি মানুষ? এতো খারাপ আমি দেখিনি…’, মেয়ের ভয়াবহ পরিণতি দেখে অসহায় বাবার বিলাপ
‘এরা কি মানুষ? এতো খারাপ আমি দেখিনি…’, মেয়ের ভয়াবহ পরিণতি দেখে অসহায় বাবার বিলাপ

নিজস্ব প্রতিনিধি, নদিয়াঃ স্ত্রী উপর দিনের পর দিন চলত অত্যাচার। কখনও শারীরিক আবার কখনও মানসিক নির্যাতন। এই নির্যাতন যে শুধুমাত্র স্বামীই করত তাই নয়, স্বামীর পাশাপাশি এই নির্যাতনে তাকে সাহায্য করত শ্বশুরবাড়ির সকলেই। অভিযোগ তেমনটাই। সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দীর্ঘদিন বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন অসহায় স্ত্রী।

তবে, স্বামী ফেরত নিতে আসায়, সব রাগ, মান-অভিমান ভুলে স্বামীর হাত ধরেই ফিরে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। বুঝতে পারেননি, এর পরিণতি কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। বোঝেননি যে এই ধরনের মানুষেরা কখনও ঠিক হন না, হতে পারেন না। 

তাই শ্বশুরবাড়ি ফিরতেই সেই চেনা পরিবেশটা ফিরে আসে। শুরু হয় ফের সেই নরকযন্ত্রণা। আর সব শেষে পরিণতি ভয়ঙ্কর মৃত্যু। ঘরের মধ্যেই গৃহবধূর শরীরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটা নদিয়ার শান্তিপুর থানার ঢাকা পাড়া এলাকার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে তাহেরপুর থানার বিননগর বিলপাড়ার বাসিন্দ যুবতী মিনা পালের সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় শান্তিপুর থানা ঢাকা পাড়ার বাসিন্দ উজ্জ্বল পালের। বর্তমান তাঁদের একটি তিন বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ওই মহিলার স্বামী উজ্জ্বল পাল, শ্বশুর অতিশ পাল, শাশুড়ি কল্পনা পাল এবং জা টুম্পা পাল তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। বাপের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতো। তাছাড়া মিনা কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সেই অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেও মিনার উপর চুরির মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওই গৃহবধূর পরিবারের। 

জানা গিয়েছে, মূলত বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় অত্যাচার। এর আগেও অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একাধিকবার বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে, স্বামী বারবার তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেন। পরিবারের আরও অভিযোগ যে, কয়েকদিন আগেও তাকে অনুরোধ করে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল উজ্জ্বল। এরপরই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁকে মেরে ফেল গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওই গৃহবধূকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই শান্তিপুর থানায় মিনার বাপের বাড়ির সদস্যদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই মুহূর্তে মিনার পরিবারের দাবি, তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ইতিমধ্যেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ। এদিন মৃতা মিনার অসহায় বাবা সংবাদমাধ্যমের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মেরেই ফেলল ওরা আমার মেয়েটাকে। এরা কি মানুষ? এত খারাপ আমি দেখিনি। ওদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই। আমার মেয়েটার উপর এত অত্যাচার করল। ওদের শাস্তি হোক চাই।

অন্যদিকে, পেশায় মোটর মেকানিক উজ্জল পালের বিরুদ্ধে মৃত ওই গৃহবধূর দাদা বিশ্বজিৎ অভিযোগ করেছেন, ‘মাঝেমধ্যেই মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ফিরে তার বোনের ওপরে অত্যাচার করত উজ্জল পাল। আমাদের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা নেওয়ার জন্য বোনের উপর চাপ দিত। উজ্জল পাল ও তার বাড়ির লোকজন আমার বোনকে প্রচণ্ড মারধোর করে গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে। আমরা তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’

এদিকে, মিনার মায়ের দাবি, মিনার শিশুকন্যাকেও আগামী দিনে মেরে ফেলবে ওরা। তাই ও থাকবে তাঁদের কাছেই, শান্তিপুর থানাকেও এই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

তবে, মিনার শাশুড়ি কল্পনা পালের বক্তব্য, ‘আমার ছেলের সঙ্গে বৌমার কোনো অশান্তি হয়েছিল কিনা জানিনা। তবে সেই সময় বৌমা তার নিজের ঘরে একাই ছিল। আমি ছিলাম আমার ঘরে। হঠাৎই পাশের বাড়ির লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকে। তারপরেই দেখা যায় বৌমা গায়ে আগুন লাগিয়েছে।’