বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ খেত মজুরের কন্যা! সম্বর্ধনা পুলিশ-প্রশাসনের

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২, ০৯:০৫ পিএম | আপডেট: জুন ৫, ২০২২, ০৩:০৯ এএম

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ খেত মজুরের কন্যা! সম্বর্ধনা পুলিশ-প্রশাসনের
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ খেত মজুরের কন্যা! সম্বর্ধনা পুলিশ-প্রশাসনের

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দীর্ঘ ৩ বছর ধরে লড়াই করেছেন দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে। অন্যদিকে লেখাপড়া করার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও প্রতিদিন তাড়া করে বেড়াত তাঁকে। মনের জোর থাকলে যে কোনও প্রতিবন্ধকতাকেই যে জয় করা যায় তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন বর্ধমানের সামিনা খাতুন। মারণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

সামিনার এই অভূতপূর্ণ সাফল্যকে কুর্নিশ জানাতে শুক্রবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে হাজির হন জামালপুরের বিধায়ক সহ এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী, জামালপুর থানার ওসি রাকেশ সিং, ব্লকের যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত। এদিন সামিনাকে সম্বর্ধনা দেন তাঁরা। প্রত্যেকেই স্বীকার করেন, ইচ্ছাশক্তি এবং অদম্য মনের জোর সামিনাকে লেখাপড়া শেখা থেকে টলাতে পারেনি। সামিনা এই দুরারোগ্য রোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন।

প্রতিভাবান সামিনা পূর্ব বর্ধমানের অন্তর্গত জামালপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম রামনাথপুরের বাসিন্দা। তাঁর বাবা শেখ আলম পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ক্ষেত মজুরির কাজ করে সংসার চালান তিনি। মা নুরজাহান বেগম সাধারণ গৃহবধু। প্রবল দারিদ্রতার মধ্যেই দিন কাটে তাঁদের। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ সামিনার। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পঠনপাঠন শেষ করে তিনি ভর্তি হন বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর একের পর এক ক্লাসে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হতে থাকেন তিনি।

সামিনা তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন। হঠাৎই তাঁর জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধি বাসা বাঁধে সামিনার শরীরে। প্রথমাবস্থায় বোঝা না গেলেও পরবর্তীকালে একাধিক শারীরিক পরীক্ষায় তাঁর কান ও গলার নিচের অংশে ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যেও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামিনার কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি চলে। উঠে যায় মাথার চুল, গলায় প্রচন্ড ব্যথা। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা তো দূর, কথা বলতেও ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু মনের জোরের কাছে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। অতএব শুরু হয় মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। সমস্ত শারীরিক কষ্টকে দূরে রেখে প্রথম চেষ্টাতেই সফলতার সঙ্গে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন সামিনা।

শুক্রবার সামিনার বাড়ি গিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা তাঁর চিকিৎসা এবং আগামী দিনে পড়াশোনা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এই প্রসঙ্গে এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিদিন কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে সামিনা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ওর সাফল্যের বিষয়টি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণার। প্রশাসনের তরফ থেকে ওকে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হবে।”

তাঁর সংযোজন, “সামিনা যাতে ভালো চিকিৎসা পায় সেই বিষয়টিও দেখা হবে। হার না মেনে যে জীবনে সফল হওয়া যায় সেই বার্তাই সামিনা সমাজকে দিতে পেরেছে। এককথায় সামিনাই ‘রোল মডেল’। সবাই সামিনার পাশে দাঁড়াবে এটাই আমি চাইব।” অন্যদিকে যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত বলেন, “সামিনার জীবন ও সাফল্য অনুসরণযোগ্য। ওর চিকিৎসা ও আগামী দিনের পড়াশোনার ব্যাপারে যা সাহায্যের প্রয়োজন সেটা আমরা করব।” দুশ্চিন্তা না করে মনের জোরে সামিনাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন গৌতম দত্ত।