বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলায় ঢুকে বিহার পুলিশের পরিচয় দিয়ে ‘তান্ডব’! JCB দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ২০টি বাড়ি

চৈত্রী আদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২, ০৪:৫১ পিএম | আপডেট: মে ২১, ২০২২, ১০:৫১ পিএম

বাংলায় ঢুকে বিহার পুলিশের পরিচয় দিয়ে ‘তান্ডব’! JCB দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ২০টি বাড়ি
বাংলায় ঢুকে বিহার পুলিশের পরিচয় দিয়ে ‘তান্ডব’! JCB দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ২০টি বাড়ি

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে বাংলায় ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল বিহার পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-বিহার সীমান্তবর্তী এলাকা লাগোয়া সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সহরাবহরা এলাকায় তারা ঢুকে পড়ে। ওই অঞ্চলে রাস্তার ধারে বসবাসরত ২০ টি দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ব্যাপক মারধর করা হয় পরিবারের সদস্যদের। বিহার পুলিশের মারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আবালবৃদ্ধবনিতা।

গোটা ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত সত্তর বছর ধরে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সহরাবহরা মৌজা সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাজ্য সড়ক লাগোয়া ওই এলাকায় প্রায় কুড়িটি পরিবার বসবাস করছে। এদের নিজস্ব কোনও ভিটেমাটি নেই। বাড়িঘরের অভাবে সরকারি জমিতে কুঁড়েঘর বানিয়েই বসবাস করছিলেন তারা। এই পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের বাড়িগুলির ঠিক পেছনেই ছিল তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামানিকের জমি। তাদের মাঝে মধ্যেই উঠে যাওয়ার হুমকি দিতেন তৃণমূল নেতা। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছে। এমনকি এও জানা গিয়েছে, বিহারে প্রায়শই যাতায়াত ছিল গণেশ প্রামাণিকের।

অভিযোগ, ওই ২০ টি পরিবারকে উৎখাত করতেই বিহার পুলিশ দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। শুক্রবার গভীর রাত্রে বেশকিছু বিহার পুলিশকর্মীকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলির ওপর আক্রমণ চালানো হয়। জেসিবি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে ফেলা হয় কুঁড়েঘরগুলি। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক লাঠিপেটা করা হয়। রেহাই পায়নি মহিলা এবং বাচ্চারাও। পরিবারগুলির অভিযোগ, প্রত্যেকেই পুলিশের পোশাকে ছিলেন এবং সবাই হিন্দিতে কথা বলছিলেন। এদের মধ্যে অনেকের হাতে বন্দুকও ছিল।

এর পাশাপাশি পুরো ঘটনায় সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামাণিককে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন ইন্দ্রজিৎ সরকার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। এদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওটা সম্পূর্ণ বিহার পুলিশের ব্যাপার। এই বিষয়ে তাঁর কিছু করার নেই।

বিহার পুলিশের হাতে আক্রান্ত ওই পরিবারগুলির এক সদস্য জানিয়েছেন, “আমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আচমকাই একদল পুলিশ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এরা বিহারের বিভিন্ন থানার পুলিশ। আমাদের সমস্ত বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয় এবং ব্যাপক মারধর করে। গত ৭০ বছর ধরে আমরা এই অঞ্চলে বসবাস করছি। আমাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সমস্ত কাগজপত্রই বাংলার। আমাদেরকে উৎখাত করার জন্যই চক্রান্ত করে বিহার পুলিশের সাহায্য নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে গণেশ প্রামানিক। আমরা ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।” এই প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার গাছের বক্তব্য, “এই ঘটনা প্রসঙ্গে আমাদের কিছু জানা ছিল না। তবে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

গোটা ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনার কথা জানতে পেরে এলাকায় যান উত্তর মালদার বিজেপি সংসদ খগেন মুর্মু। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দেন। এরপর হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসির সঙ্গে এই প্রসঙ্গে দীর্ঘক্ষন আলোচনা করেন। থানা থেকে বেরিয়ে এসে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব ও বিহার পুলিশের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তিনি বলেন, ওই পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে এলাকার তৃণমূল নেতারা বেশকিছু পুলিশকর্মীকে ভাড়া করে এনে তাণ্ডব চালিয়েছে। এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

অন্যদিকে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমানও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা-বিহার সীমান্তে বসবাস করছে পরিবারগুলি। কিন্তু বিহার পুলিশের এই আচমকা আক্রমণ কখনই মেনে নেওয়া যায় না। আর ওই পরিবারগুলি বাংলার জমিতে বসবাস করছে নাকি বিহারের জমিতে তা বিচার করার জন্য আইন রয়েছে। বাংলা পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে বিহার পুলিশের এহেন আক্রমণ কখনোই বরদাস্ত করা হবে না। তবে এই ঘটনার পেছনে তৃণমূলের যোগাযোগের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।