বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে মরা সাপ! আতঙ্কে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটলেন মায়েরা

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২, ০২:০৭ পিএম | আপডেট: জুন ৯, ২০২২, ০৮:০৭ পিএম

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে মরা সাপ! আতঙ্কে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটলেন মায়েরা
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে মরা সাপ! আতঙ্কে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটলেন মায়েরা

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সবেমাত্র প্রথম গ্রাসটা সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছিলেন মা। এরপর দ্বিতীয় গ্রাস নিজের মুখে তুলতে গিয়েই চোখ উঠল কপালে। খিচুড়ির মধ্যে একটি মরা সাপের বাচ্চা। এমন দৃশ্য দেখে রীতিমতো গা গুলিয়ে ওঠার জোগাড় হয় ওই মহিলার। সাপ মিশ্রিত খিচুড়ি খেয়ে একের পর এক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে। কারুর বমি হয়, আবার কারোর পেটে ব্যথা। এই অবস্থায় শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন মায়েরা। সব মিলিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

জামালপুর ব্লকের পাড়াতল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগকালাপাহাড়। ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির জন্য খাবার দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ওই কেন্দ্রে ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই মূলত খোরদোপলাশী, কাঁঠালডাঙ্গা ও বাগকালাপাহাড়ের বাসিন্দা। প্রতিদিনই খাবার নিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হাজির হন তারা। কিন্তু এদিন যে খাবারের মেনুতে ‘সাপ’ থাকবে এমনটা তাদের কল্পনার অতীত ছিল।

অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। বেলা ১০ টার মধ্যে রান্না শেষ হয়। এরপর খিচুড়ি নিয়ে যে যার বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে বসে খিচুড়ি খেতে গিয়ে বিষয়টি এক শিশুর অভিভাবকের চোখে পড়ে। তারা দেখেন, খিচুড়ির মধ্যেই রয়েছে একটি মরা সাপের বাচ্চা। তা দেখে রীতিমতো আঁতকে ওঠে শিশুটি ও তার পরিবারের লোকজন। তৎক্ষণাৎ গ্রামের অন্যান্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতী মহিলাদের পুরো বিষয়টি জানান তারা। গোটা ঘটনার কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা।

ততক্ষণে অনেক শিশুই খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল। স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকদের মনে উদ্বেগের সঞ্চার হয়। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে শিশুরাও। সময় নষ্ট না করে এদিন দুপুরেই তাদের জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখেন চিকিৎসকরা। বেশ কিছুক্ষণ অবজারভেশনেও রাখা হয়। এরপর প্রত্যেককেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক শিক্ষিকা জ্যোৎস্না ঘোষ বলেন, খিচুড়ি রান্না করার সময় কোনও ভাবে তাতে একটা সাপের বাচ্চা পড়ে যায়। বিষয়টি প্রথমে কারুর নজরেই আসেনি। সাপ সহই রান্না হয় খিচুড়ি। এরপর তা সকলের মধ্যে বিতরণও করে দেওয়া হয়। বাড়িতে খিচুড়ি খেতে গিয়েই এক শিশুর অভিভাবক খেয়াল করেন যে খিচুড়িতে সাপের বাচ্চা রয়েছে। এমনকি ওই শিশু ও তার পরিবার থালা সমেত খিচুড়ি সেন্টারে নিয়ে যান‌ বলে জানান তিনি।

শিশুদের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে জামালপুরের বিএমওএইচ চিকিৎসক ঋত্বিক ঘোষ বলেন, খিচুড়িতে সাপ দেখতে পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শিশুরা। তবে তাদের মধ্যে তেমন কোনও অসুস্থতা দেখা যায়নি। প্রত্যেকেই সুস্থ রয়েছে। ছ’জন শিশুকে বেশ কিছুক্ষণ অবজারভেশনে রেখে তারপর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গোটা ঘটনায় এখনও মুখ খোলেননি জামালপুর ব্লকের সিডিপিও সুশোভন রায়। উপরন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রত্যেককে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সন্তোষজনক উত্তর না মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।