বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আদালতের অনুমতি মেলা সত্ত্বেও উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল করলেন শুভেন্দু! কিন্তু কেন?

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: জুলাই ২১, ২০২২, ০৩:২১ এএম

আদালতের অনুমতি মেলা সত্ত্বেও উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল করলেন শুভেন্দু! কিন্তু কেন?
আদালতের অনুমতি মেলা সত্ত্বেও উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল করলেন শুভেন্দু! কিন্তু কেন?

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের দিনই উলুবেড়িয়ায় সভা করতে চেয়েছিল পদ্মশিবির। কিন্তু জেলা প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। পরে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে শর্তসাপেক্ষে সভা করার অনুমতি মেলে। কিন্তু আদালতের অনুমতি পাওয়ার পরেও ২১ জুলাই উলুবেড়িয়ায় কোনও সভা হবে না। বুধবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ায় সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, ২১ জুলাই সভা করতে বাধা দেওয়ায় আগামী ২৭ তারিখ হাওড়ায় পাল্টা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হবে।

কিন্তু হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন? বিগত কয়েকদিন ধরেই উলুবেড়িয়ায় বিজেপির সভা নিয়ে শুনানি চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের এজলাসে হয় শুনানি। এরপর বুধবার বিকেলেই রায় ঘোষণা করে আদালত। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, একমাত্র শর্তসাপেক্ষেই উলুবেড়িয়ায় সভা করার অনুমতি মিলবে। তালিকায় ছিল একগুচ্ছ শর্ত। সেই সকল শর্তের মধ্যেই সভার স্থান এবং সময়ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় আদালতের পক্ষ থেকে।

জানানো হয়, ওই দিন রাত ৮ টার পর সভা শুরু করা যাবে এবং রাত ১০টার মধ্যেই সভা শেষ করতে হবে। স্থান বদলে উলুবেড়িয়ায় বিজেপির দলীয় দফতরের সামনেই সভা করতে হবে। এমনকি এও জানানো হয় যে, ওই সভায় বিজেপি নেতারা কোনওরকম প্ররোচনামূলক ভাষণ দিতে পারবেন না। ‌এর পাশাপাশি সভায় ২০ টির বেশি লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয় আদালত। কোথায় মাইক লাগানো যাবে তা স্থির করার দায়িত্ব দেওয়া হয় উলুবেড়িয়া মহাশাসককে। তিনি যদি দেখেন ২০ টির বেশি লাউডস্পিকার লাগানো হয়েছে তাহলে তা তিনি বাদ দিতে পারবেন।

আদালতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থান এবং সময় কোনওটাই পছন্দ হয়নি গেরুয়া শিবিরের। সেই কারণেই উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান শুভেন্দু। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “হাইকোর্টকে দিয়ে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তা সভা করার বিপক্ষে। কিন্তু বিজেপি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পার্টি। দেশ চালায়। ১৮ টি রাজ্য চালায়। তাই বিজেপিকে সভা করতে দেওয়ার ঝুঁকি হয়তো মহামান্য আদালত নিল না।”

আদালতের নির্দেশানুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যে ৬ টার মধ্যে‌ স্থানীয় থানাকে সভাস্থল সম্পর্কে অবগত করার পর পুলিশ সেই সভাস্থল পরিদর্শন করবে এবং দেখবে যে জায়গাটি ২০০০ লোক উপস্থিত থাকার জন্য উপযুক্ত কিনা। যদি তা না হয় তাহলে কত মানুষ সভায় উপস্থিত হতে পারবে সেই বিষয়ে পুলিশকে জানাবে বিজেপি। এর পাশাপাশি কোনওভাবেই যাতে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ না হয় সেই দিকেও নজর রাখতে হবে। হাওড়ার স্থানীয় মানুষ ছাড়া বাইরে থেকে এসে সভায় অংশগ্রহণ করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে উলুবেড়িয়া জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বাউড়িয়ায় বিজেপির সভা আয়োজিত হবে বলে স্থির করা হয়। আদালতে বিজেপির আইনজীবী বলেন, হাওড়া পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)-এর কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। এরপর দিন চারেক আগে পুলিশ জানিয়ে দেয়, সভা করার অনুমতি মিলবে না। আইনজীবীর অভিযোগ, প্রথমে এক ব্যক্তি তাঁর জায়গায় সভা করার অনুমতি দিলেও পরে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।  তাই বাধ্য হয়ে ২১ জুলাই সভা করার জন্য জায়গা দিতে রাজি হন না তিনি।

এই প্রসঙ্গে বিচারপতির মন্তব্য, কোনও ব্যক্তি তাঁর জায়গা কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন কিনা সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এক্ষেত্রে আদালতের কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “২১ জুলাই কেন? ২০ তারিখ হতে পারে, ২২ তারিখ হতে পারে। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন হলে না হয় মানতাম নির্দিষ্ট দিন করেছে, কিন্তু এক্ষেত্রে কী নির্দিষ্ট দিন আছে?”

বিচারপতির প্রশ্নে বিজেপির আইনজীবীর উত্তর, সভার জন্য ইতিমধ্যেই সমস্ত লোককে বলা হয়ে গিয়েছে। দিল্লি থেকেও আসছেন নেতারা। কিন্তু ওই দিন কলকাতায় সভা থাকায় ভুবনেশ্বর থেকে গাড়ি করে তাঁরা আসবেন। আগের স্থির করা জায়গায় সভা করার অনুমতি না মিললেও বিজেপির কাছে আরও দুটি বিকল্প স্থান রয়েছে। ওই জায়গায় সভা করলে মোটামুটি দু’হাজারের মতো লোক হবে। এরপরই বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দেয় আদালত। কিন্তু আদালতের শর্তানুযায়ী স্থান এবং সময় পছন্দ না হওয়ায় সমাবেশ বাতিল করেন শুভেন্দু অধিকারী।