বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

করোনার আগেও হয়েছিল লকডাউন! ৩৫০ বছর আগে ইংল্যান্ডের এই গ্রাম প্রথম শিখিয়েছিল 'কোয়ারান্টাইন'-এর অর্থ

০৬:৫৮ পিএম, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১

করোনার আগেও হয়েছিল লকডাউন! ৩৫০ বছর আগে ইংল্যান্ডের এই গ্রাম প্রথম শিখিয়েছিল 'কোয়ারান্টাইন'-এর অর্থ
করোনা ভাইরাসের জেরে গতবছরের প্রায় অর্ধেকের বেশি মাস গৃহবন্দী কাটিয়েছে মানুষ। শিখেছে 'কোয়ারান্টাইন' কথার অর্থ। সারা বিশ্ব জুড়ে চলা লকডাউনে ঘরে বন্দী থেকে মানুষ শিখেছে রোগ প্রতিরোধের ভূমিকা। তবে করোনাই প্রথম নয়, আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে মহামারী প্লেগের কারণেও ঘরবন্দী হয়ে কাটিয়েছিল মানুষ। রোগ প্রতিরোধে ইংল্যান্ডের ছোট্ট এক গ্রামে চালু হয়েছিল 'কোয়ারাইন্টাইন'এর নিয়ম। আজ শোনাবো সেই কাহিনীই... ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের এক গ্রাম ইয়াম। পিক জেলা জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই অবস্থিত সেই গ্রামটি। একসময় মহামারি প্লেগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে ঘরবন্দী হয়েছিল সেই গ্রামের সমস্ত বাসিন্দা। এমনকি বাইরের জগৎ থেকেও রীতিমতো বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তারা। ঘটনাটি ১৬৬৫ সালের। জর্জ ভিকারস গ্রামের এক দর্জি সে সময় লন্ডন থেকে অনেক কাপড় নিয়ে এসেছিলেন গ্রামে। সেই কাপড়ের মাধ্যমেই প্লেগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছিল সারা গ্রামে। এর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই সারা গ্রামে শুরু হল মৃত্যুর প্রহর গোণা। প্রথমে মারা গেলেন জর্জ ভিকারস নিজেই। এরপর একে একে তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে তাঁর বহু গ্রাহকও মারা যেতে থাকেন। তারপর বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। মোট ২৬০ জনের মৃত্যু হয় এই গ্রামে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, পরিবারের মৃতদের জন্য কবর খুঁড়তে হত নিজেকেই। সংক্রমণের ভয়ে সাহায্যের হাত টুকুও বাড়াতেন না কেউই। গ্রামপ্রধান যদিও বুঝতে পেরেছিলেন। ততদিনে প্লেগ ভয়ানক এক মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। তাই প্রধান দেরি না করেই সারা গ্রামে চালু করে দিলেন লকডাউন। গ্রামবাসীদের নির্দেশ দিলেন কোয়ারান্টাইনে থাকার। গ্রামবাসীরাও সাদরে মেনে নিয়েছিলেন তা। সারা জগৎ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ইয়াম গ্রাম৷ সেখান থেকে যেমন বাইরে কেউ বেরোতেন না। তেমনই বাইরের কাউকেও ঢুকতে দেওয়া হতো না গ্রামে। এমনকি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নিজের বাড়ির বাইরেও পা রাখতেন না কেউই। গ্রামের প্রধানের নাম ছিল উইলিয়াম মমপেসনস। তাঁর নামেই গড়ে উঠেছিল মমপেসনস দেওয়াল। গ্রামবাসীদের জন্য এই দেওয়ালের ওপরে খাবার এবং নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্য রেখে যেতেন আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। জীবানুমুক্ত করার জন্য দেওয়ালটির একপাশে রাখা ভিনিগার মেশানোর জলের মধ্যে অর্থ ফেলে রাখতেন ইয়াম গ্রামের বাসিন্দারা। তারপর জিনিসগুলি সংগ্রহ করতেন। প্রায় ১ বছর এ ভাবেই ঘরবন্দী অবস্থায় কাটান গ্রামবাসীরা। তারপর ধীরে ধীরে রোগ মুক্তি ঘটতে থাকে। বর্তমানে সেই দেওয়াল পর্যটকদের জন্য অন্যতম দর্শনীয় এক স্থান। এছাড়াও জর্জ ভিকারসের বাড়িটিও দ্রষ্টব্য স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বর্তমানে। রোগের প্রভাব কাটিয়ে গ্রামটি এখন আরও সতেজ এবং সুন্দর। তবে আজও সেই গ্রামে প্রতি বছরের অগস্ট মাসের শেষ রবিবার পালিত হয় 'প্লেগ রবিবার'।