বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

কুঁদঘাটে ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে মৃত চার শ্রমিকই মালদার, স্বজন হারিয়ে বাক্যহারা মৃতের পরিজনেরা

০৮:২৮ পিএম, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১

কুঁদঘাটে ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে মৃত চার শ্রমিকই মালদার, স্বজন হারিয়ে বাক্যহারা মৃতের পরিজনেরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদাঃ আজ কুঁদঘাট ম্যানহোলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৪ জন শ্রমিক। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা সেখানেই আটকে পড়েন। অনেক চেষ্টার পর, তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা করা যায়নি। চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই মৃত চার শ্রমিকই মালদা জেলার। এই চারজনের মধ্যে রয়েছেন তিন ভাই। প্রত্যেকেই হরিশ্চন্দ্রপুরের মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুর এলাকার বাসিন্দা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তিন শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন তিন ভাই আলমগীর হোসেন(২৮), জাহাঙ্গীর আলম(২৬), সাবির আলি(২৪)। অন্যজন লিয়াকত আলি(২২) তাদের প্রতিবেশী। এদিন দুপুরে তাঁদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা এলাকায় পৌঁছাতেই, পরিবারের পাশাপাশি গোটা এলাকাজুড়েই শোকের ছায়া নেমে আসে। উল্লেখ্য, কাজ করতে নামার কিছু পরেই, আচমকা জলের তোড়ে ভেসে যান ওই চার শ্রমিক। অভিযোগ, জল সরবরাহ বন্ধ না করে, কাজ করার কারণেই এই বিপত্তি ঘটে। এদিকে, বেলা ১২টা নাগাদ আটকে পড়া ওই শ্রমিকদের চিৎকার শুনতে পান স্থানীয়রা। তখনই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশ এবং দমকলে। জানা গিয়েছে যে, খবর পেয়ে, দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান প্রশাসনের আধিকারিকরা। এরপর বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকেই অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন। উদ্ধারকারীরা জানান, তাঁদের চারজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উপযুক্ত নিরাপত্তার সরঞ্জাম ছিল না ওই শ্রমিকদের কাছে। কেবল দড়ি বেঁধেই, তাঁরা নীচে নেমেছিলেন। তার জেরেই বিপদ আরও বেড়ে যায়, বলে দাবি তাঁদের। মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চারজনই দীর্ঘদিন ধরেই ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। কখনও বেঙ্গালুরু, কখনও কেরলে! আগে একসময় কলকাতাতেও কাজ করেছেন। লকডাউন শুরু হতেই, তাঁরা করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই, মাস তিনেক আগে তাঁরা কলকাতায় যান। আজ কুঁদঘাট ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে তাঁদের মৃত্যু হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর রেল লাইনের ওপারে তালসুর এলাকায় বাড়ি মৃতদের। মাটির বাড়ির উপরে টালির ছাদ। প্রত্যেকেই অভাবি। তোরাব আলির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় আলমগীর বিবাহিত। তার নাবালক দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। এছাড়া বাড়িতে রয়েছেন মা রোজিনা বিবিও। দুর্ঘটনায় তিন ছেলেরই মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সকলেই। এদিকে প্রতিবেশী লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর বিবি আবার অন্তঃস্বত্তা। তার বাবা মহম্মদ হানিফ, দাদা সাহাদাতও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁরা এই মুহূর্তে ভিন রাজ্যেই রয়েছেন। মৃত তিন ভাইয়ের বাবা তোরাব আলি বলেন, সকালেই বড় ছেলে ফোন করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছিল। কিন্তু তিন ছেলেই যে এভাবে অসময়ে দিয়ে চলে যাবে, তা তিনি কল্পনাই করতে পারছেন না। তিনি আক্ষেপ করতে থাকেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বাঁচব।’ আর লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর বিবির কথা বলার ক্ষমতা নেই, স্বামীর মৃত্যুর খবর জানার পরে। স্বামীর মৃত্যুর কথা জানার পরেই, মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। কোনও রকমে বলেন, ‘রাতেই ফোন করে কেমন আছি খোঁজখবর নিয়েছিল। সেটাই যে শেষকথা বুঝতে পারিনি।’