শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

অবশেষে অর্পিতার ইচ্ছেপূরণ করল তৃণমূল! দলে বড় দায়িত্বে প্রাক্তন সাংসদ

০৪:২৩ পিএম, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

অবশেষে অর্পিতার ইচ্ছেপূরণ করল তৃণমূল! দলে বড় দায়িত্বে প্রাক্তন সাংসদ

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চলতি সপ্তাহের বুধবার আচমকাই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। বুধবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুকে ইস্তফা পত্র জমা দেন তিনি। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ ইস্তফা দেওয়ার পরেই স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ বিষয়ে তিনি একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন যে, তিনি বাংলার হয়ে কাজ করতে চান। তাই আর সাংসদ থাকতে চান না।

এবার তাঁর সেই ইচ্ছেকেই মান্যতা দিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর ইচ্ছে পূরণ হল অবশেষে। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক করা হল প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে। শুক্রবার অর্পিতাকে চিঠি দিয়ে রাজ্য তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সি জানান, অবিলম্বে অর্পিতাকে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এবং আশা যে সংগঠনের উন্নতির জন্য কাজ করবে।’

এই নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে অর্পিতা জানিয়েছেন যে, ‘আমি সরাসরি সংগঠনের হয়ে কাজ করতে চাই। এনিয়ে এর আগেই দলকে জানিয়েছিলাম। অবশেষে দল আমার সেই আবেদনে সিলমোহর দিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের ভোটার লিস্টে আমি আগেই নাম তুলেছি। ওই জেলার কাজ করতে পারলে ভাল হয়। তবে, দল আমাকে যেখানকার দায়িত্ব দেবে সেটাই আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’

এদিকে, অর্পিতা ঘোষের ইস্তফা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ গতকাল বলেছিলেন যে, ‘অর্পিতা ঘোষের জায়গায় নতুন লোককে পাঠানো হচ্ছে। অর্পিতা ঘোষকে তাঁর পার্টি তো সমস্ত কিছুই দিয়েছে। এমপি হয়েছেন, জেলা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আবার রাজ্যসভায় ছিলেন। এবার নতুন লোককে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকে নতুন লোক চান্স পাচ্ছেন, তাই তাঁকে ইস্তফা দিতে হল।’

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে অর্পিতা তাঁর ইস্তফা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে থিয়েটার জগতে সফলভাবে কাজ করার পর তিনি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। লোকসভার সদস্য থেকে রাজ্যসভার সাংসদ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর থেকেই তিনি বাংলার হয়ে কাজ করার কথা ভাবছিলেন বলেও চিঠিতে জানিয়েছেন। তাই বাংলার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েই রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। এবার তাঁর বাংলার মানুষের হয়ে কাজ করার সেই ইচ্ছে পূরণ হল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূল অর্পিতা ঘোষকে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে। সেই সময় রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের হাওয়া বইছে। এই কেন্দ্রে জিতেও যান অর্পিতা। তবে, এরপর ২০১৯ সালে একই আসনে টিকিট পেলেও, জিততে পারেননি। সে বছর তিনি ওই একই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এরপরই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠান। এর মাঝে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতিও হন তিনি। আর এবার সেই রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন অর্পিতা ঘোষ।

অন্যদিকে, অর্পিতার ছেড়ে যাওয়া আসনে কাকে তৃণমূল পাঠাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দলের সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে তৃণমূল। সেজন্যই অসমের শিলচরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সু্স্মিতা দেবকে রাজ্যসভার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই অর্পিতার ইস্তফার পর, ভিনরাজ্যের ‘বড়’ নামকে সেই আসন দেওয়ার ভাবনাচিন্তা রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই ‘বড়’ নেতা নাকি আবার সর্বভারতীয় স্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নামও।

কে সেই ‘বড় নেতা’? সূত্রের খবর, সেই তালিকায় নাম রয়েছে ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোত বিক্রম মানিক্য দেববর্মার। যিনি ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের’ পক্ষে সওয়াল করেছেন। তবে, তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, প্রদ্যোতকে দলে নিলে, তিনি সম্ভবত নিজের লক্ষ্যপূরণের দিকেই মনোনিবেশ করবেন বেশি করে। পাশাপাশি তৃণমূলকে রাজ্যকে ভাগকারী হিসেবেও আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যাবে গেরুয়া শিবির। উল্লেখ্য, যে কৌশল বাংলায় নিয়েছে তৃণমূল। তাই তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে, রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, তাহলে কি কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর কোনও নেতা তৃণমূলে যোগ দেবেন? আর তাঁকেই রাজ্যসভায় পাঠানো হবে! কী হয় ঘাসফুল শিবিরের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সিদ্ধান্ত তা তো সময়ই বলবে।