বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘অবৈধ দখলদার’ হঠাতে গিয়ে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গতকাল অসমের দরং জেলা। এই উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের গুলিতে ইতিমধ্যে ২ আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণের অভিযোগও উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এর জেরে পাল্টা গুলি চালানো হয় অসম পুলিশের পক্ষ থেকে। তার জেরেই দুই আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৯ পুলিশ কর্মী। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অসম সরকার।
এদিকে, ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মাটিতে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির উপর লাফাচ্ছেন এক চিত্রগ্রাহক। লাঠি দিয়ে তাঁকে মারছেন পুলিশ কর্মীরাও। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ওই বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে প্রথমে তেড়ে গিয়েছিল। তারপর পুলিশ কর্মীরা তাঁকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে মাটিতে ফেলে। এই সময় আচমকাই ছবি তুলতে থাকা চিত্রগ্রাহকও ওই বিক্ষোভকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাঁকে লাথি মারতে শুরু করে। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই, সব মহল থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর জেরে শেষপর্যন্ত ওই চিত্রগ্রাহককে গ্রেফতার করে অসম পুলিশ।
https://twitter.com/DGPAssamPolice/status/1441077838367498241পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অভিযুক্ত চিত্রগ্রাহকের নাম বিজয় শঙ্কর বানিয়া। পেশায় তিনি ফটোগ্রাফার। বৃহস্পতিবার অসমের দরং জেলায় ঢোলপুর ৩ নম্বর এলাকায় ‘অবৈধ দখলদার’ উচ্ছেদ অভিযান ক্যামেরাবন্দি করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারী ও পুলিশের পারস্পরিক সংঘর্ষে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ঢোলপুর-গরুখুঁটি এলাকা। এই এলাকায় প্রায় ২০০ টি পরিবারের বাস। ওই জমি দখলদারদের হাত থেকে নিয়ে সেখানে চাষের কাজ শুরু করতে চায় অসম সরকার। সেই উদ্দেশ্যেই গতকাল অসম পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে, পুলিশকে দেখে ধারালও অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে স্থানীয়রা। প্রথমে এই আক্রমণে পাল্টা পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এরপর উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। বিক্ষোভ কারীদের ছোড়া ইটে প্রায় ৯ জন পুলিশ কর্মী আহত হন। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি চালানোয় দু’জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অসম সরকার।
পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ উচ্ছেদ কাজে বাঁধা দিতে আচমকাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ইট- পাথর ছোড়া শুরু হয়। এর জেরে এক মহিলা কনস্টেবল-সহ ৮ পুলিশ কর্মী আহত হন। অন্যদিকে, যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী কিনা, তা জানা যায়নি। এরই মধ্যে উক্ত চিত্রগ্রাহকের অমানবিক আচরণে নিন্দার ঝড় সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, গোটা ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করার জন্য বিক্ষোভকারীদের পিছনে ছুটছেন বিজয়ও। পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে সরে যেতে বললেও, তিনি কিছুক্ষণ পরে ফের সামনে চলে আসেন। এরপরই যে বিক্ষোভকারীর গুলি লেগেছে, তাঁকে লাথি মারেন বিজয়। কিছু দিয়ে আঘাতও করেন। পুলিশের নির্দেশ অমান্য করেই, এমন কাজ করেন বিজয়। অভিযোগ এমনটাই। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এতো কিছুর পরেও, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, চর অঞ্চলগুলিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে মুক্ত করার অভিযান চলবে। ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলে মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাস। এই অঞ্চলের কৃষিজীবীদের অনেককেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে অনেক সময়ই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা এখানে প্রবেশ করলেও, বহু সময়ই পরিচয়ের বিভ্রান্তির জেরে রাজ্যের বাসিন্দা কৃষকদেরও পুলিশি জুলুম সহ্য করতে হয়।
এদিকে, এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। টুইটে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি লেখেন যে, ‘রাজ্যের ভাই-বোনদের পাশে রয়েছি। ভারতের কোনও সন্তানের এটা প্রাপ্য নয়।’
https://twitter.com/RahulGandhi/status/1441017169920380930অন্যদিকে, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাইকিয়ার বক্তব্য, ‘এরা সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক। সরকারি জমি দখল করে থাকছিল তারা।’ ঘটনায় গোহাটি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অসম সরকার।