শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

নন্দীগ্রামে ভোটে কারচুপি! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন দিল এই জবাব

০৪:০৭ পিএম, এপ্রিল ৪, ২০২১

নন্দীগ্রামে ভোটে কারচুপি! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন দিল এই জবাব

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নন্দীগ্রামে ভোটে কোনোভাবেই কোনও কারচুপি হয়নি। এমনটাই মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাবে জানালো নির্বাচন কমিশন। ১ এপ্রিল বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামের কোনও বুথে কোনও নিয়মের লঙ্ঘন করা হয়নি। হয়নি কোনও ছাপ্পা ভোটও। নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিঠির জবাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই চিঠিতে এভাবেই কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর আনা অভিযোগও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, মক ড্রিল শুরু হয় ভোর সাড়ে ৫টায়, সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। চিঠিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোন কারচুপি হয়নি।

রবিবার মমতার চিঠির জবাব দিতে গিয়ে, পাল্টা চিঠি লিখে নির্বাচন কমিশন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ওইদিন মমতা বয়াল-২’এর ৭ নং বুথ নিয়ে চিঠিতে যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, তাঁর সেই অভিযোগের কোনও সত্যতা মেলেনি। তথ্যগত ভুল ছিল তাতে। এর জেরে ভোটের মুখে তৃণমূল ও কমিশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও কিছুটা বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম-সহ রাজ্যের ৪ জেলায় ৩০ টি আসনে গত ১ এপ্রিল ছিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। তবে ওই দিন সকলের নজরে ছিল নন্দীগ্রামের মতো হাইভোল্টেজ কেন্দ্রে। কারণ এই কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই কেন্দ্রে বিশেষ নজর ছিল নির্বাচন কমিশনেরও।

শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের জন্য একজন এসপি পদমর্যাদার অফিসার নিয়োগ করে নির্বাচন কমিশন। নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকে নিয়োগ করা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে, শুধুমাত্র নন্দীগ্রামের শান্তিশৃঙ্খলা দেখভাল করার জন্য। নন্দীগ্রামের উত্তেজনার কথা মাথায় রেখেই, কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল নন্দীগ্রামকে। কারণ মনে করা হচ্ছিল যে, নন্দীগ্রামের এই ভোটের ফলাফলই ঠিক করে দিতে পারে আগামী দিনে বাংলার রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। এই কেন্দ্রে কোনও অশান্তি ছাড়া সুস্থ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করতে বদ্ধপরিকর ছিল নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই। তাই চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছিলেন না কমিশনের আধিকারিকরা।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন আগেই নন্দীগ্রামের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৫৫টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এর পাশাপাশি বেশ কিছু বুথকে শনাক্ত করা হয় অতি স্পর্শকাতর হিসেবেও। এছাড়াও এই বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা।

তবে, ভোটের দিন সেখানে সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথে অশান্তি হচ্ছিল বলে খবর আসছিল। নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও স্বাভাবিকভাবেই এই খবর পৌঁছেছিল। তিনি দুপুরের পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বয়াল-২’এর ৭ নং বুথে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। তিনি যাওয়ার পরও সেখানে ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষও হয়। অশান্তির বাড়তে থাকায়, সেখানে বসেই নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অভিযোগ করেন, এই বুথে ৮০ শতাংশ ছাপ্পা ভোট চলছে। এ নিয়ে কমিশন যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাঁর অভিযোগপত্রে মোট ৬৩ টি অভিযোগ ছিল।

তৃণমূল নেত্রীর চিঠি পেয়ে, কমিশন তখনই সেই বুথে পর্যবেক্ষককে পাঠান। পর্যবেক্ষক ঘুরে দেখে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়ে জানান যে, ৭নং বুথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, কোনও নিয়মভঙ্গ হয়নি। নির্বিঘ্নেই ভোট প্রক্রিয়া মিটেছে। পাশাপাশি সেই রিপোর্টে কোথাও বহিরাগতদের প্রবেশ বা বন্দুক দেখিয়ে দুষ্কৃতীদের বুথ দখলের কোনও অভিযোগ নেই।

এর তিনদিন পর, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সচিব উমেশ সিনহা রীতিমতো কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন তৃণমূল নেত্রীকে। তাতে তৃণমূল নেত্রীর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া তো হয়েছে, এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ওই বুথে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব প্রমাণ হিসেবে দাখিল করে কমিশন পরিষ্কারভাবে বলতে চেয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাপ্পা ভোটের তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। পাশাপাশি কমিশন আরও জানিয়েছে যে, ২ ঘণ্টা ধরে প্রার্থী বুথে থাকা অবস্থায়, দুই বিরোধী স্লোগানের মধ্যেও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা হয়নি। কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। কোনও ভোটারকে ভয় দেখানো হয়নি।