শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

লাঠিখেলা-শরীরচর্চার সঙ্গে দেশপ্রেমের দীক্ষাও দিতেন অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পুলিনবিহারী দাস

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৯:১৭ পিএম | আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০৩:২৭ এএম

লাঠিখেলা-শরীরচর্চার সঙ্গে দেশপ্রেমের দীক্ষাও দিতেন অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পুলিনবিহারী দাস
লাঠিখেলা-শরীরচর্চার সঙ্গে দেশপ্রেমের দীক্ষাও দিতেন অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পুলিনবিহারী দাস

সময়টা বঙ্গভঙ্গের। স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউয়ে তখন উত্তাল বাংলা। স্বাধীনতা আসবে সশস্ত্র বিপ্লবেই। এমন বিশ্বাসেই তখন নিজেদের প্রস্তুত করছেন বাংলার যুব বিপ্লবী দল। সে দলে ছিলেন পুলিনবিহারী দাসও ( Pulin Behari Das )। নরমপন্থী নয়, পালটা মারেই ছিনিয়ে নিতে হবে স্বাধীনতা। এই নীতিতে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন তিনিও।

 

জন্ম ১৮৭৭ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন মাদারিপুর মহকুমার উকিল। পরিবারের বহুজনই তখন ব্রিটিশদের অধীনে চাকরি করেন। তাই বাবা ভাবলেন পড়াশোন করে চাকরির চেষ্টা করবে পুলিনও। কিন্তু তাঁর মনে তখন অন্যই এক চিন্তাধারা। ব্রিটিশ শাসনে জর্জরিত দেশকে কীভাবে মুক্তির পথ দেখানো যায়! পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটো থেকে চর্চা ছিল শরীরচর্চা এবং লাঠিখেলায়। ছেলেবেলা থেকেই ব্যায়াম করতেন তিনি। একটু বড় হলে সঙ্গে এসে জুটল লাঠিও। তেল মাখানো মোটা, শক্ত লাঠি নিয়ে কেরামতি দেখাতেন তিনি। ধীরে ধীরে লাঠিখেলায় হয়ে উঠলেন পোক্ত।

 

এরপর বাংলায় এল বঙ্গভঙ্গ। ততদিনে পুলিনবিহারী ঢাকাতে শুরু করে দিয়েছেন নিজস্ব লাঠিখেলা আর শরীরচর্চার আখড়া। সেসময় ঢাকায় উপস্থিত হলেন প্রমথনাথ মিত্র এবং বিপিনচন্দ্র পাল। জীবনের মোড় ঘুরে গেল পুলিনবিহারীর। ইতিমধ্যেই কলকাতায় তৈরি হয়েছে অনুশীলন সমিতি। বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ এই সংগঠন। প্রমথনাথ এবং বিপিনচন্দ্র চেয়েছিলেন ঢাকাতেও গড়ে উঠুক এমনই এক সংগঠন। এরপর ১৯০৬ সালের অক্টোবর মাসে পুলিনবিহারীর নেতৃত্বে ৮০ জন যুবককে তৈরি হল ঐতিহাসিক ‘ঢাকা অনুশীলন সমিতি’। তাঁর পিছনে ছিলেন বাংলার সেই দুই বিপ্লবীই।

 

পুলিনবিহারীকে দেখে আরও যুবক এগিয়ে এল অনুশীলন সমিতিতে। শরীরচর্চা থেকে শুরু করে অস্ত্র চালনা, বন্দুক চালানো সমস্ত কিছুরই শিক্ষা দেওয়া হত সেখানে। সেইসঙ্গে দীক্ষা দেওয়া হল দেশপ্রেমেরও। এরই পাশাপাশি পুলিনবিহারী লিখে ফেললেন ‘লাঠিখেলা ও অসিশিক্ষা’ নামক বইটি। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের লাঠিযুদ্ধে শিক্ষিত করে তুলতে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি তিনি। সেইসঙ্গে জারি রইল বিপ্লবী আন্দোলনও। সেসময় ঢাকার তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর আক্রমণ করলেন পুলিনবিহারী। মারা না গেলেও, গুরুতর যখম হলেন ম্যাজিস্ট্রেট। আর বিপ্লবী? ১৯০৮ সালে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠানো হল।

 

আন্দামান থেকে ফিরে এলে তিনি তৈরি করেন বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতি। এরপর যতদিন বেঁচেছিলেন, যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন দেশের কাজে। বিপ্লবী চিন্তাধারায় প্রভাবিত করে তুলেছেন তাদের। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি সেই সময়ে নানাবিধ দেশজ অস্ত্র নিয়ে রীতিমত গবেষণা করছিলেন। তাঁর জ্ঞান দিয়ে গিয়েছিলেন যুব সমাজকেও। তবে ভারতীয় ইতিহাসে তিনি আজ খুব পরিচিত কোনও নাম নন। বাঙালি যেন তাঁকে ভুলেই গিয়েছে কবে। তবে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পাতায় বাকিদের সঙ্গে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে পুলিনবিহারী দাসের নামও।