শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ভোট পরবর্তী হিংসার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, বাংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা

০১:১৯ পিএম, মে ৬, ২০২১

ভোট পরবর্তী হিংসার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, বাংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য শাসনক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইতিমধ্যেই শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, ২ তারিখ ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসা। যা এখনও অব্যাহত।

এই হিংসার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দু’বার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর থেকে। উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বুধবারই সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। পাশাপাশি চিঠির উপযুক্ত জবাব না পেলে, কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা। এবার সেই হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টা পেরোনর আগেই, বাংলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি দল পাঠানো হল।

ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১২ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরের দিনই  সোমবার কালীঘাটের সাংবাদিক বৈঠক থেকে নির্বাচনে পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারে, বর্ধমানে তৃণমূল কর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন অভিযোগ এদিন তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুধু তিনিই নন,  বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও একই অভিযোগ ছিল। 

একই দিনে, অর্থাৎ সোমবারই মুরলিধর সেন লেনে সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, গতকাল নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে থেকেই রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তাঁদের উৎসাহে এবং পার্টি কর্মীদের উদ্যোগে বিজেপি পার্টির কার্যালয়, কর্মী, নেতা ও তাঁদের বাড়ি সব জায়গায় হামলা শুরু হয়েছে। তার ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করলে, তাঁদের বক্তব্য, 'আমরা কী করব?'

তিনি আরও দাবি করেছিলেন যে, ‘রাজ্যে হিংসা নতুন কোনও ঘটনা নয়। হার-জিতের পর সামান্য উত্তেজনা থাকেই। তবে, ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি, তার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মানুষ ঘরছাড়া, দোকানপাট লুঠ হয়ে যাচ্ছে। সেইসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে হিংসার খবর আসছে। জিতে অনেকেই তাঁদের আনন্দ ধরে রাখতে পারছেন না। উত্তর-দক্ষিণ সব জায়গায় এরকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অরাজকতা যদি এত বড় সমর্থন পাওয়ার পর চলতে থাকে, তাহলে দায়িত্ব কে নেবে?’

পরিস্থিতি সামাল দিতে শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ করতে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আর এবার পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। চার সদস্যের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব।

সূত্রের খবর, এই প্রতিনিধি দল রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোদাখালি, সুন্দরবন, ক্যানিং, জগদ্দল যাবেন এবং এর পাশাপাশি সেখানকার গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। এরপর দিল্লি ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দেবে এই প্রতিনিধিদল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট হয়ে গেছে, ফলাফলও বের হয়েছে। তা সত্ত্বেও, শেষ হচ্ছে না রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাবলি। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে অশান্তির ঘটনার খবর। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দেন, ‘কেউ যদি অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সরকার। বলেন, ভোটের পর কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে। আজ থেকে আইনশৃঙ্খলা আমার হাতে। কঠোর হাতে এই অশান্তির মোকাবিলা করব।’

বুধবার তাঁরা চিঠি পাঠিয়ে ফের রাজ্যকে সতর্ক করার পরেই, বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এদিকে অমিত শাহের মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস।