বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ছেলেকে ট্রেনে তুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাবা জানতে পারেন যে, যে ট্রেনে ছেলেকে কিছুক্ষণ আগেই তুলে দিয়ে এসেছেন, সেই ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সময় নষ্ট না করে, উদ্বিগ্ন বাবা ছেলেকে খুঁজতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়েও ছেলের সন্ধান পাননি। তা সত্ত্বেও মনের কোণে আশা ছিল যে, জীবিত ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন।
ছেলের সন্ধানে একটা সময় না চাইতেও মর্গে যান, সেখানে গিয়েই দেখা পেলেন ছেলের। প্রথমে কিছুটা সময়ের জন্য যেন মাথার উপর আকাশটা ভেঙে পড়েছিল। মনে মনে ভাবছিলেন যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে দাঁড়িয়েও যেন মিরাকল ঘটে। আর জীবিত সন্তানকে ফিরে পান। কিন্তু শতাধিক মৃতদেহের ভিড়েও প্রাণ ছিল তরুণের। বাবার প্রার্থনা সফল করে মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এলেন হাওড়ার তরুণ।
জানা গিয়েছে, হাওড়ার ওই তরুণের নাম বিশ্বজিৎ মালিক। গত শুক্রবার শালিমার স্টেশন থেকে তাঁকে ট্রেনে তুলে দেন বাবা হেলারাম মালিক। তারপরেই খবর আসে বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেকে ফোন করেন হেলারাম, ফোনের ওপ্রান্ত থেকে শুধু ছেলের ক্ষীণ গলার আওয়াজ পেয়েছিলেন। তারপর আর যোগাযোগ হয়নি ছেলের সঙ্গে। কিন্তু ওই গলার আওয়াজ থেকেই হেলারাম আশাবাদী ছিলেন, তাঁর ছেলের বেঁচে আছেন।
তাই দেরি না করে, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হন হেলারাম। ঘটনাস্থলে পৌঁছেও ছেলের সন্ধান পাননি। স্থানীয়দের পরামর্শে একাধিক হাসপাতালে গিয়ে ছেলের খোঁজ করতে থাকেন পাগলের মতো। কিন্তু সেখানেও সন্ধান মেলেনি। ফলে বুকে একরাশ আশঙ্কার পাথর চেপেই পৌঁছে যান বাহানাগা হাই স্কুলে, যেখানে অস্থায়ীভাবে মর্গ বানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও প্রবেশাধিকার মেলেনি ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন এক বাবার। কিন্তু সেখানেই হঠাৎ চোখে পড়ে, এক মৃতদেহের ডান হাত কাঁপছে। তখনই ছেলেকে দেখে চিনতে পারেন হেলারাম।
মর্গের মধ্য থেকে জীবিত ছেলেকে ফিরে পেয়েই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কটক মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর বন্ড সই করে বিশ্বজিতকে কলকাতায় নিয়ে আসেন তাঁর বাবা। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিশ্বজিৎ। পায়ে ইতিমধ্যেই অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। যদিও এখনও জ্ঞান ফেরেনি ২৪ বছর বয়সি তরুণের। যদিও, আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল, জানাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
আপনার মতামত লিখুন :