শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ঠাণ্ডা মাথায় খুন! চারজনকে জীবন্ত সমাধি! কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা শুনলে, আঁতকে উঠতে হবে

০৬:০৭ পিএম, জুন ১৯, ২০২১

ঠাণ্ডা মাথায় খুন! চারজনকে জীবন্ত সমাধি! কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা শুনলে, আঁতকে উঠতে হবে

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে একের পর এক আঁতকে ওঠার মতো তথ্য সামনে আসছে। ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে বাবা-মা-বোন এবং নিজের দিদাকে খুন করেছে বছর ১৯ এর আসিফ মহম্মদ। মালদহের কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে ক্রমশ চোখ কপালে উঠছে তদন্তকারী অফিসারদের।

আজ মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন যে, কোল্ডড্রিঙ্কের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে খাইয়েছিল আসিফ। এরপর ঠান্ডা মাথায় এক একজন সদস্যকে সুড়ঙ্গপথে জলের ট্যাঙ্কে এনে অচেতন অবস্থাতেই ফেলে দেয় সে। জলের ট্যাঙ্কে আগে থেকেই জল ভরে রেখেছিল সে। এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের জাল কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা জানতে, ইতিমধ্যেই দফায় দফায় অভিযুক্ত আসিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছান ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর উপস্থিতিতেই শুরু হয় খোঁড়ার কাজ। খনন কাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধার হয় মৃত চারজনের দেহ। ইতিমধ্যেই মৃত চারজনের দেহ উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, ট্যাঙ্কের উপর মাটি ও বালি চাপা দেওয়া ছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট খোঁড়ার পর দেহগুলি উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকের মুখেই সেলোটেপ লাগানো ছিল। হাত-পাও বাঁধা ছিল তাঁদের। গতকালই আসিফের বড় ভাই আরিফ মহম্মদ পুলিশের কাছে খুনের বিষয়টি জানালে, গোটা ঘটনা সামনে আসে এবং আসিফকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের দাবি, জেরায় আসিফ চারজনকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পরিবারের বাকি সদস্যদের দেখতে না পেয়ে, স্থানীয়দেরও সন্দেহ হয়। কী কারণে পরিবারের সদস্যদের এভাবে খুন করল আসিফ, তা খতিয়ে দেখছে কালিয়াচক থানার পুলিশ। পাশাপাশি আসিফের দাদা আরিফের ভুমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ এই হত্যার ঘটনা ঘটে। সেইসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আসিফের দাদা আরিফও। পুলিশি জেরায় আরিফ দাবি করেছেন, তাঁকেও ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল আসিফ। তবে, পরে, ওষুধের প্রভাব কমে যাওয়ায়, কোনওরকমে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে, পালাতে সক্ষম হন আরিফ। এই প্রসঙ্গে মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছে, ‘কেন আরিফ দীর্ঘ চারমাস পর এই ঘটনার অভিযোগ করেন, সেদিকটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ভূমিকাও সন্দেহজনক।’ পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের ঘর থেকে লক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার হয়েছে। ঠিক কী কারণে তার এত টাকার প্রয়োজন হয়েছিল, সেদিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে তদন্ত শুরু হওয়ার পর, প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, আসিফ মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল। জানা গিয়েছে, বাড়ির ভেতরেই একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিল আসিফ। সেখানেই দেহগুলি পুঁতে ঢালাই করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এমনটাই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।

অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত গৃহকর্তা ইট, বালি, পাথরের ব্যবসা করতেন। ডাম্পারও ছিল তাঁদের। পরিবার যথেষ্ট বিত্তশালী ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরাও। স্থানীয়দের আরও দাবি, অভিযুক্ত এলাকারই এক মিশন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। প্রতিবেশীদের কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। ঘরের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় কাটাত সে। প্লাইউড দিয়ে বেশ কয়েকটি কফিন তৈরি করেছিল অভিযুক্ত আসিফ। বাবা-মাকে ওই কফিনে বন্দি করে এক্সপেরিমেন্টও করেছিল সে। তাঁদের মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে কফিনে ঢুকিয়েছিল আসিফ। এমনটাই জানা যাচ্ছে পুলিশ সূত্রে।

উল্লেখ্য, এমন নৃশংসতা এর আগে এ রাজ্যের মানুষ চাক্ষুস করেছে কিনা সন্দেহ। এদিকে আসিফের সঙ্গে একটি ডার্ক ওয়েব যোগের ছায়াও পাওয়া গিয়েছে। ডার্ক ওয়েব বিষয়ে সে রীতিমত নিয়মিত পড়াশোনা চালাত। নিজের বাড়িতেই একটি ল্যাবরোটারি বানিয়েছিল সে।