শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

রাজ্যজুড়ে জ্বরের আতঙ্ক! অজানা জ্বরে ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে পরিস্থিতি

০৮:২৯ পিএম, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

রাজ্যজুড়ে জ্বরের আতঙ্ক! অজানা জ্বরে ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে পরিস্থিতি

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অজানা জ্বরের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে জেলায় জেলায়। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুরের পর এবার দক্ষিণবঙ্গেও এই অজানা জ্বর তার থাবা বসিয়েছে।

জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর পেরিয়ে এবার জ্বরের থাবা দক্ষিণবঙ্গে। অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪২ জন শিশু। বিশেষ টিম তৈরি করে চিকিৎসা শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিন কয়েকের ব্যাবধানে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্বর, সর্দি কাশি আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে শিশুদের। এই নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় মোট ৩ শিশুর মৃত্যু হল জলপাইগুড়িতে। বুধবার জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ও এসডি ডক্টর সুশান্ত রায়। সকালে মৃত্যু হয় ময়নাগুড়ির এক শিশুর। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ি এলাকা এবং ময়নাগুড়ি ব্লকের দুই শিশুর মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৩ শিশুর মৃত্যু হল। এরা প্রত্যেকেই জ্বর-সর্দিকাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়িতে এই জ্বর ছড়ানোর শুরুর দিকে শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ছড়িয়েছে কিনা, তা জানতে শিশুদের রক্তের নমুনা, সোয়াব কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে পাঠানোর বন্দোবস্তও হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬ শিশুর শরীরে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু মিলেছে বলে খবর। জলপাইগুড়িতে শিশুদের জ্বর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ চিকিৎসকের প্রতিনিধি দল ঘুরে গিয়েছে।

সোমবারেই একটি মেডিক্যাল টিম এসেছিল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। আজ বুধবারও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে থেকে ৭ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম এসে পৌঁছয় জলপাইগুড়িতে। শিশুবিভাগ পরিদর্শনের পরে তাঁরা জানান যে, পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। জ্বরের জন্য মূলত সিজিনাল ফিভারকেই দায়ী করলেন ওই দলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

এদিকে, কলকাতাতেও একই অবস্থা। এখানেও অজানা জ্বরে কাহিল শিশুরা। কেন এই জ্বর? এর চিকিৎসা পদ্ধতিই বা কী হবে? এসবের জন্যই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল স্বাস্থ্যভবন। এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে থাকছেন সৌমিত্র ঘোষ, মিহির সরকার, ভাস্বতী ব্যনার্জী, বিভূতি সাহা, মৌসুমি নন্দীর মতো মেডিসিন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরোলজিস্টরা।

অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪২ জন শিশু। বিশেষ টিম তৈরি করে চিকিৎসা শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিন কয়েকের ব্যাবধানে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্বর, সর্দি কাশি আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে শিশুদের। আবার গত কয়েকদিন ধরে মালবাজার মহকুমা জুড়ে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন শিশু কোলে নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। বেশিরভাগ বাচ্চাই জ্বরে আক্রান্ত। পাশাপাশি ডেঙ্গুর থাবাও বসেছে মালবাজার মহকুমায়।

এ ব্যাপারে মাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিনিয়র চিকিৎসক দীপকরঞ্জন দাস বলেন, ‘প্রতিদিন বহু শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে মাল ব্লক হাসপাতালে। সমস্যা বেশি থাকলে ভর্তি করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই এরকম জ্বর নিয়ে শিশুরা আসে, তবে এবারে সংখ্যাটা বেশি। এতেই চিন্তিত সকলে। এখনও বোঝা যাচ্ছে না এটা ভাইরাল না ব্যাকটেরিয়াল। আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে ডেঙ্গিতেও আক্রন্ত হচ্ছে শিশুরা।’

অজানা জ্বরে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছে।জ্বর সংক্রান্ত সমস্ত কিছুর টেস্ট হয়েছে। করোনার পরীক্ষাও করা হয়েছে। কিন্তু সমস্ত পরীক্ষার ফলই নেগেটিভ এসেছে। আবার অজানা জ্বরে আক্রান্ত আসানসোলের শিশুরাও। কলকাতার 'স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে' জ্বরের কারণ ধরা না পড়ায়, নমুনা পাঠানো হয়েছে পুণের ভাইরোলজিক্যাল ল্যাবে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার মাঝেই এই অজানা জ্বর চিকিৎসক মহলের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। প্রতিদিনই আসানসোল জেলা হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে বেশ কয়েকজন শিশু। এই মুহূর্তে আসানসোল জেলায় ভর্তি রয়েছে ৬৪ জন শিশু। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের ফলেই এই জ্বর ভাবলেও, পরীক্ষায় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নমুনা না মেলায় জ্বরের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে চিকিৎসকমহল। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। জানা গিয়েছে, ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেলেও ৭ বছর পর্যন্ত শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাই বেশি নজরে এসেছে।

কেন এভাবে হঠাৎ করে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে? চিকিৎসকদের কথায়, যারা হাসপাতালে আসছে, তাদের প্রায় সকলেরই প্লেটলেট দ্রুত নেমে যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গি, এমনকী করোনা টেস্টে রিপোর্টও নেগেটিভ আসছে। প্রশ্ন তাহলে কেন এই জ্বর? রোগের উৎস সন্ধানে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল অর্থাৎ সোমবার সেই বিশেষজ্ঞ কমিটির ৫ সদস্য জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলেন। এবার রাজ্যস্তরেও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হল।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগে মূলত শীতকালে শিশুরা ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হত। কিন্তু, বর্তমানে বর্ষাকালেও তারা জ্বরে ভুগছে। এদিকে, এই জ্বরের সঙ্গে অনেকের শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। ফলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সময় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনওভাবেই যাতে শিশুরা বৃষ্টিতে না ভেজে, সেদিকে পরিবারকে বিশেষ নজর রাখার কথা জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও যথাসম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা, বাড়ির কারও সর্দি কাশি থাকলে তাঁর থেকে শিশু যাতে দূরত্ব বজায় রাখে সেদিকে নজর রাখা। বারবার হাত ধোয়া এসব দিকেও অভিভাবকদের নজর দিতে হবে বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।