শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

হুবহু নৈহাটির বড়মা! 'জীবন্ত' কালী সেজে নেটজনতাকে তাক লাগালেন দমদমের এই মডেল

০৮:০৬ পিএম, অক্টোবর ২৬, ২০২১

হুবহু নৈহাটির বড়মা! 'জীবন্ত' কালী সেজে নেটজনতাকে তাক লাগালেন দমদমের এই মডেল

আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই বাঙালির আলোর উৎসব দীপাবলি। আর এদিনই আরাধনা করা হয় মা কালীকে। ঘোর অমাবস্যায় আলোর উৎসবে মেতে মাতৃ বন্দনায় মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি৷ তবে দেবীর আরাধনার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেল মা কালীর এমন এক রূপ, যা তাক লাগিয়ে দিল নেটিজেনদের। বারবার সেই রূপ দেখেও আসল নকলের ভ্রমে ডুবে রয়েছেন জনতা।

ঠিক যেন হুবহু নৈহাটির বড়মা! সেই একই মুখাবয়ব। জ্বলজ্বল করছে দেবীমূর্তির দু নয়ন। বার বার নজর আটকে যাচ্ছে সেই নয়ন যুগলে। যেন পরম যত্নে চক্ষুদান করেছেন শিল্পী৷ শিল্পীর এত সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখে সংশয়ই জাগছে না মনে। আপাতদৃষ্টিতে ধরাও পড়ছে না কোনও তারতম্য। আর তুলির টানে সেই নিখুঁত শিল্প ফুটিয়ে তুলেছেন পেশায় রূপটান শিল্পী সোদপুরের মুক্তি রায়৷ যাঁর মুখে ফুটে উঠেছে সেই অপরূপ সাজ, তিনি দমদমের রিখিয়া রায়চৌধুরী। পেশায় তিনি এক মডেল।

নিপুণ হাতের জাদুতে রিখিয়ার শরীর জুড়ে মাতৃ মূর্তির আদল ফুটিয়ে তুলেছেন মুক্তি। নিজেকে ‘বড়মা’ রূপে গড়ে তুলতে ধৈর্য্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টার সময় দিয়েছেন রিখিয়াও। দু'জনের মিলিত প্রচেষ্টায় ফলাফলই এই শিল্প নৈপুণ্য। যা দেখে চমকে উঠছেন মানুষ। আবছা হয়ে আসছে আসল নকলের মধ্যেকার ব্যবধান। মানব মুখের ওপর আঁকা ছবিকে দেবীর আসল মুখ ভেবেই ভ্রমে পড়ছেন নেটজনতা৷ অনেকে ঠুকছেন প্রণামও।

রিখিয়াকে নৈহাটির 'বড়মা'র আদলে গড়ে তোলার পিছনে কি কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে? কথাপ্রসঙ্গে রূপটান শিল্পী মুক্তি জানিয়েছেন, "বছর দশেক আগে প্রথম বার নৈহাটির বড় মায়ের পুজোয় যাই। ওই বিশাল মূর্তি আর তার ভাব দেখে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। চোখে জলও চলে এসেছিল। সেই মায়ের রূপই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম। প্রথমে ভয় করছিল। দ্বিধাও কাজ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে ফেললাম।"

https://www.facebook.com/muktimua13/posts/419938249500214

জানা গিয়েছে এই কাজের সময়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চোখ বন্ধ করে বসে থাকতেন রিখিয়া। তুলিতে মায়ের আদল ফুটিয়ে তুলতেন মুক্তি। অসম্ভব ধৈর্য্য দু'জনেরই৷ তাঁদের কথায়, বড়মা আবেগের জায়গা। সেখানে কোন‌ওরকম ভুল-ত্রুটি হোক তাঁরা চাননি। তাঁদের সেই পরিশ্রমের রূপই এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিঁখুত কাজের প্রশংসাও হচ্ছে সর্বত্র। হাজার বার দেখেও বিষ্ময়ে মুখ ফেরাতে পারছেন না জনতা। মুক্তি আর রিখিয়াকে ভরিয়ে তুলছেন সাধুবাদে। আর তাঁদের দু'জনের বক্তব্য? তাঁদের কথায়, "আমরা জানতাম এই ছবিটা ভাইরাল হবে, কিন্তু মানুষ যে এই কাজটা এইভাবে পছন্দ করবেন, এই রকম বিপুল সাড়া পাবো তা আমরা কল্পনাও করিনি।"

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটির‌ অরবিন্দ রোডে আয়োজিত হয় জনপ্রিয় ‘বড়মা’ কালীর পুজো। বিগত ১০০ বছর ধরে সাড়ম্বরে এই পুজো চলে আসছে। প্রথমে এটি বাড়ির পুজো হলেও পরবর্তীতে এটি সর্বজনীনের চেহারা নেয়। নৈহাটির বড়মার আকৃতিও বিশালাকার। ২২ ফুট অর্থাৎ ১৪ হাত দীর্ঘ এই প্রতিমার জনপ্রিয়তা দেশে-বিদেশে। বড়মাকে মারাত্মক জাগ্রত মনে করেন ভক্তরা৷ নৈহাটির সেই ‘বড় মা পুজো সমিতি’র সম্পাদক জানিয়েছেন, "ছবি দেখে মনে হচ্ছে, মা যেন জ্যান্ত হয়ে গিয়েছেন। আমাদের মা এমনিতেই জাগ্রত, তিনি কথা শুনতে পান। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে সবটা। অবিকল যেন মায়ের মূর্তি দেখছি মনে হচ্ছে। পুজোর ঠিক কয়েক দিন আগে এই ছবি যেন একটি উপহার শিল্পীদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।"