বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার দেশ নয়া ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে। মাত্র ২৭৯ দিনেই ১০০ কোটি ভ্যাকসিনের গণ্ডি অতিক্রম করেছে দেশ। সেই সঙ্গে প্রথম ১০০ কোটি টিকাকরণের দেশ হিসেবে বিশ্বরেকর্ড ভারতের ঝুলিতে এল। এবার বছর শেষের আগে ৯৪৪ মিলিয়ন ১৮-ঊর্ধ্ব নাগরিকের টিকাকরণের লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, কো-উইন পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে টিকাকরণ শুরু হতেই রচিত হয় ইতিহাস। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ১০০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করল দেশ। বিশ্বের আর কোনও দেশ এখনও পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ টিকাকরণের ধারেকাছে যেতে পারেনি। ১০০ কোটি টিকাকরণের মাইলফলক পেরোনর পরে শুক্রবার দেশবাসির মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশ ১০০ কোটির টিকাকরণের গণ্ডি অতিক্রম করায়, স্বভাবতই গর্বিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশের এই সাফল্যে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিন তিনি জাতির উদ্দেশে ভারনে বলেন যে, ‘এই সাফল্যে সকল দেশবাসীর ভূমিকা রয়েছে। করোনা কালে কর্তব্য পালন করেছে দেশ। সকলকে অভিনন্দন। এটা শুধুমাত্র একটা সংখ্যা নয়, ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। নতুন ভারতের পরিচয়। যে ভারত কঠিন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তা পূরণ করতে সক্ষম। যে ভারত সংকল্পে দৃঢ় থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতেও পারে।’
এদিনের ভাষণে শুরু থেকেই দেশের সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গলায় ছিল অহংকারের সুর। তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার অন্য দেশ থেকে ভারত এখন অনেক এগিয়ে। যখন অতিমারি পর্ব শুরু হয়েছিল, তখন অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ভারত অতিমারির মোকাবিলা করতে পারবে? এত অনুশাসন পালন করা সম্ভব কি? এও প্রশ্ন উঠেছিল যে, ভারত এত টিকা দিতে পারবে কি? আদৌ ভারতে ভ্যাকসিন আসবে? অন্য দেশ থেকে টিকা কিনতে পারবে ভারত? এও বলা হচ্ছিল যে, ভারতের মতো গণতন্ত্রে এই মহামারীর সঙ্গে লড়াই করা খুবই মুশকিল হবে। বলা হচ্ছিল, বেশিরভাগ মানুষই টিকা নিতে আগ্রহী হবেন না। আজ এই সব প্রশ্নের জবাব হল ১০০ কোটির টিকাকরণের মাইল স্টোন।’
এদিন মোদী আরও জানান যে, ভারতের এই সাফল্য গোটা বিশ্বের কাছে তার শক্তির পরিচয় বহন করবে। পাশাপাশি এদিন নিরখরচায় সকল মানুষকে টিকা দিতে পাড়া নিয়েও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘দুনিয়া এবার ভারতকে করোনা থেকে বেশি সুরক্ষিত মনে করবে। ভারত গোটা বিশ্বে যা স্বীকৃতি পেয়েছে তা আরও মজবুত হল। এটাই আসল সবকা সাথ সবকা বিকাশের উদাহরণ।’
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোগ যেমন ভেদাভেদ করে না, তেমন টিকা করণেও ভেদাভেদ করা হয়নি। সাধারণ নাগরিকের মতোই ভিআইপি-রাও টিকা নিয়েছেন।’ তিনি এও বলেন যে, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করেই দেশে টিকাকরণ হয়েছে। অন্যদিকে, সব দুর্গম এলাকায় এতো দ্রুত টিকা পৌঁছে দেওয়া বড় সাফল্য বলেই উল্লেখ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছিলেন থালা বাজিয়ে-প্রদীপ জ্বালিয়ে কি করোনা দূর করা সম্ভব? আসলে সেটি ছিল দেশের একতার পরিচয়। তবে টিকাকরণ হয়েছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।’
https://twitter.com/ANI/status/1451408921965465600এদিন টিকাকরণের সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি দেশবাসীকে সতর্কও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গত বছর দীপাবলিতে যে ভয়ের পরিবেশ ছিল, তা এবছর অনেকটাই কেটে গিয়েছে। এবছর দীপাবলিতে মানুষ অনেকটাই সুরক্ষিত অনুভব করছেন। তবে মাস্ক পরা নিত্য অভ্যেস করে তুলতে হবে। ঠিক যেমন বাইরে বেরলে আমরা জুতো পরি, তেমনই মাস্ককেও নিত্যসঙ্গী করে ফেলতে হবে।’
https://twitter.com/ANI/status/1451412468949929989উল্লেখ্য, এদিন মেড-ইন-ইন্ডিয়া ভ্যাকসিনের পাশাপাশি মেড-ইন-ইন্ডিয়ার অন্য জিনিসের উপরও গুরুত্ব বাড়ানোর কথা বলেন মোদী। তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্য কিনুন। সেই সব পণ্য কিনুন যা কোনও ভারতবাসী নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করেছেন। আজ যদি আমার দেশের ভ্যাকসিন আমাকে সুরক্ষা দিতে পারে তাহলে আমার দেশের তৈরি জিনিসও সাদরে গ্রহণ করা উচিত।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনার বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র টিকাকরণ। একেবারে শুরুতেই একথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি নিজেই দেশবাসীকে বারবার টিকা দানে উৎসাহ দিয়েছেন। আর এর ফলও এল হাতেনাতে। টিকাকরণের এই সাফল্য অতিঅবশ্যই নিঃসন্দেহে মোদী সরকারের সাফল্য হিসেবে পরিগণিত হবে। দল হিসাবে বিজেপিও সরকারের এই সাফল্যের ব্যাপক প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে টিকাকরণের এই রেকর্ডের ফায়দা তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।