শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

অদ্ভুত ব্যামো! ৩০০ দিন ঘুমিয়ে কাটান রাজস্থানের এই ‘কুম্ভকর্ম’

০২:৫৪ পিএম, জুলাই ১৮, ২০২১

অদ্ভুত ব্যামো! ৩০০ দিন ঘুমিয়ে কাটান রাজস্থানের এই ‘কুম্ভকর্ম’

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অদ্ভুত ঘুম। সাধারণত একদিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা-এই সময়ের ঘুমকে পর্যাপ্ত ঘুম হিসেবে ধরা হয়। এই হিসেবের বেশিও যদি কেউ ঘুমোয়, তাহলে তা কত হতে পারে, খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। কিন্তু রাজস্থানের এক ব্যক্তির কথা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে, যিনি ঘুমে রামায়ণের ‘কুম্ভকর্ণ’ কেও হার মানান। নাম পুরখারাম। বছর ৪২-এর পুরখারাম ৮-৯ বা ১০-১২ ঘণ্টা নয়, বছরের ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে কাটান! অবাক হচ্ছেন শুনে? অবাক হওয়ারই কথা অবশ্য। তবে, এটা কোনও গল্পকথা নয়, বাস্তব। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩০০ দিনই রাজস্থানের বাসিন্দা পুরখারাম গভীর নিদ্রায় মগ্ন থাকেন। আর এতেই তিনি ‘কুম্ভকর্ণ’ হিসেবে নয়া পরিচিতি পেয়েছেন।

সাধারণত কুম্ভকর্ণের নাম তখনই উচ্চারণ করা হয়, যখন কেউ দরকারের থেকে বেশি ঘুমোয়। উল্লেখ্য, পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাবণ ও কুম্ভকর্ণ তপস্যায় ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেছিলেন। রাবণ তাঁর কাঙ্খিত বর পেয়েছিলেন। তবে, কুম্ভকর্ণের যখন ব্রহ্মাদেবের কাছে বর চাওয়ার পালা আসে, ইন্দ্রদেবের অনুরোধে দেবী সরস্বতী তাঁর জিহ্বা আড়ষ্ট করে দেন। আর সেই কারণেই নাকি ‘ইন্দ্রাসনে’র বদলে ‘নিদ্রাসন’ চেয়েছিলেন কুম্ভকর্ণ। তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন ব্রহ্মাদেব। বছরের ছয় মাস ঘুমিয়েই থাকতেন কুম্ভকর্ণ। তবে, রাজস্থানের পুরখারাম ‘কুম্ভকর্ণ’ পরিচিতি পেলেও, তিনি কিন্তু আদতে কুম্ভকর্ণকেও ঘুমের ক্ষেত্রে হার মানিয়েছেন। আর এই ‘কুম্ভকর্ণ’ পরিচিত পাওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। যে কারণের জন্য তিনি বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে কাটান। সেই বিশেষ কারণ বা বলা ভাল সেই রোগের নাম অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া। তাঁর রোগের কারণেই নাগৌর জেলার ভড়বায় মানুষ এক ডাকে চেনেন পুরখারামকে।

এ এক বিরল রোগ, যা বাসা বেধেছে পুরখারামের শরীরে। এই রোগের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। ২৩ বছর আগে এই সমস্যার সূত্রপাত পুরখারামের জীবনে। আর এখন এই রোগের প্রভাবে তিনি একটানা ২৫ দিন ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। রোজগারের জন্য তিনি একটি মুদি দোকানও খুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই অদ্ভুত এবং বিরল রোগের কারণে সেই দোকানও বছরের বেশিরভাগ সময়ে বন্ধ থাকে। এমনও নাকি বহুবার হয়েছে যে, তিনি দোকানে বসে থাকতে থাকতেই, ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর একবার ঘুমিয়ে পড়লে, সেই ঘুম ভাঙানোর ক্ষমতা কারও নেই। একবার ঘুম পেয়ে গেলে, যেখানে রয়েছেন সেখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ব্যস, তার পরে ২০-২৫ দিন স্নান করানো, খাওয়ানো— সব ঘুমন্ত অবস্থাতেই করিয়ে দিতে হয় তাঁর স্ত্রী লিছমিদেবীকে। পরিবার, আত্মীয় ও পাড়ার লোকজনই তাঁর খেয়াল রাখেন। পরিবারের দাবি, অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এই রোগ সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, অ্যাক্সিস হাইপারসনমিয়া আদতে স্নায়ুর রোগ। মস্তিষ্কে টিএনএফ-আলফা নামে এক প্রকার প্রোটিনের মাত্রা ওঠাপড়ার কারণে এই রোগ হয়। প্রথমদিকে নাকি একটানা ৫ থেকে ৭ দিন ঘুমোতেন পুরখারাম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দিন। এখন তো একবার ঘুমালে ২০ থেকে ২৫ দিনের আগে ভাঙানো যায় না সে ঘুম।

যাকে নিয়ে এতো কথা, সেই পুরখারাম কী বলছেন? দীর্ঘদিন একটানা বন্ধ থাকার পরে, দোকান খুলে দেখেন দরজার বাইরে খবরের কাগজের পাহাড় জমেছে। সেই কাগজ গুনে গুনে টের পান মাসের সিংহভাগই ঘুমিয়ে পার করে ফেলেছেন তিনি। রোগ সারাতে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন এবং ওষুধপত্র খেয়েছেন। তবে, সেসবে কোনও লাভই হয়নি। তাঁর এই ঘুমের সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। পুরখারাম আরও জানিয়েছেন, ঘুমিয়ে উঠেও ফের ঘুমঘুম ভাব, দিনভর ক্লান্তি আর মাথাব্যথা থাকে।

এই অদ্ভুত রোগ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন যে, পুরখারামের এই রোগ খুবই বিরল। মাথায় আঘাত লাগলে বা অতীতে মাথায় টিউমার থাকলেও অনেক সময় পরে এই রকম অবস্থা হতে পারে। একেবারে গোড়ায় ধরা পড়লে, অনেক সময় চিকিৎসায় সারতে পারে রোগটি। তবে, রাজস্থানের পুরখারামের ক্ষেত্রে আদতে সে সম্ভবনা কতটা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। তবে, পুরখারামের স্ত্রী এবং মা আশাবাদী যে, একদিন পুরখারাম এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন।পুরখারামের মা কঁওয়ারি দেবীর আশা, তাঁর ছেলে একদিন সুস্থ হবে, আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।