শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ছিলেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার বিগত দু’বছরের ঠিকানা ডানলপের ফুটপাথ!

০৯:১২ পিএম, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১

ছিলেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার বিগত দু’বছরের ঠিকানা ডানলপের ফুটপাথ!

বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ তিনি ছিলেন পেশায় শিক্ষিকা। কিন্তু বিগত দু’বছর ধরে তিনি দিন গুজরান করেছেন ফুটপাত। ডানলপের ফুটপাতকে বানিয়ে নিয়েছিলেন নিজের ঘর। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় তিনি সম্পর্কে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা। নাম ইরা বসু। সব হারিয়ে ফুটপাতে থাকলেও, কারও সাহায্য নিতে তিনি নারাজ। এক ভাঁড় চাও তিনি নিজের পয়সায় কিনে খান। আবার কখনও কখনও নিজের টাকায় পছন্দের দোকানদারকে বিরিয়ানিও খাওয়ান।

খড়দহ প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সময়ের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন ইরা বসু। আজ তিনি ডানলপ মোড়ের এটিএমের কোনায় নিজের ঘর বানিয়ে ফেলেছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার খবরটা চাউর হতেই তিনি চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমার জীবন, আমি যা খুশি করব।’ এরপর খবর পৌঁছায় খড়দহ পুরসভার কাছে। সেখান থেকে বরাহনগর থানায়। সিপিএম নেতারাও যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। বিকেলে ইরাদেবীকে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু একজন শিক্ষিকার এমন অবস্থা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না ডানলপের সকলের কাছে পরিচিত ‘ভবঘুরে মাসিমা’ ওরফে ইরা বসু।

ইরা বসু যে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা, এই খবরে হতবাক অনেকেই। তবে, যাকে নিয়ে এতো আলোচনা তাঁর বক্তব্য, ‘মানুষটা (বুদ্ধবাবু) আজ অসুস্থ। মীরাদেবীও অসুস্থ। ওঁদের করোনা হয়েছিল। কেন ওঁদের নিয়ে টানাটানি করছেন?’

গত ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসে কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্রী এসে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন খড়দহের ওই স্কুলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দ বলেন, ‘শুনেছি, উনি অবিবাহিতা ছিলেন। ওঁর সময়কার প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে এক সময়ে থাকতেন। এখন কেন রাস্তায় থাকেন, জানি না।’ কৃষ্ণকলিদেবী আরও জানিয়েছেন যে, আগের প্রধান শিক্ষিকার চেষ্টায় ইরাদেবী পিএফের টাকা পেলেও, প্রয়োজনীয় কাগজ জমা করতে না পারায় পেনশন পান না।

যদিও আজও প্রতিদিন দু’বেলা নিজের টাকা দিয়েই ওই বৃদ্ধা চা-বিস্কুট কিনে খান বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় এক দোকানি। তিনি জানিয়েছেন, ডানলপের একটি হোটেলে প্রতিদিন মাসিমার জন্য ভাত-তরকারি রাখা থাকে। টাকা দিয়ে তা নিয়ে যান ইরাদেবী। কোথা থেকে খাওয়ার টাকা জোগাড় করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ক্ষুব্ধ স্বরে তিনি জবাব দেন, ‘ব্যাঙ্কে টাকা আছে। প্রয়োজন হলে তুলি।’ কোনওভাবেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে রাজি নন তিনি। ডানলপ ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন বাংলা-ইংরেজি কাগজ পড়েন ইরাদেবী। মনে করেন, অনলাইন পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের।

প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, খড়দহে বুদ্ধবাবুর রাজনৈতিক সভায় দেখা যেত ইরাদেবীকে। কিন্তু প্রথম থেকেই তিনি উদাস প্রকৃতির ছিলেন। মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও চলছিল। আর এক প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও এক বার ওঁকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছিলাম। তার পরে ফের নিরুদ্দেশ হয়ে যান।’ অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে মীরাদেবী শুধু বলেছেন, ‘এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। কেউ কিছু দাবি করলেই সেটা সব সময়ে সত্যি হবে, তার কোনও মানে নেই।’