শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ব্রিটিশ পুলিশকে গুলি করে হত্যা, ফাঁকি দিয়ে পালিয়েও শেষে ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং!

০৩:৫৮ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

ব্রিটিশ পুলিশকে গুলি করে হত্যা, ফাঁকি দিয়ে পালিয়েও শেষে ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং!

গতকাল ছিল মহান বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, জন্মগ্রহন করেছিলেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যুক্ত তো ছিলেনই। পাশাপাশি বিপ্লবীদের মৃত্যুর বদলা নিতে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারকে নিজে হাতে হত্যাও করেন এই বিপ্লবী। ফলস্বরূপ ফাঁসির হুকুম হয় তাঁর৷ । ১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ মাত্র ২৪ বছর বয়সে শহিদ হন তিনি। মৃত্যুর পর তিনি শহিদ-ই-আজম ভগৎ সিং নামে পরিচিত হন।

ভগৎ সিং জন্মগ্রহণ করেন পাঞ্জাবের কালান গ্রামে। তাঁর পরিবার ছিল এক দেশপ্রেমী সান্ধু জাঠ পরিবার। পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভগত সিংয়ের ঠাকুরদা অর্জুন সিং, দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে ছেলেবেলা থেকেই ভগতের মধ্যে দেশপ্রেমের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

কৈশোর কাল থেকেই ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন ভগৎ। এরপর কিশোর বয়স থেকেই তিনি একাধিক বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সময়টা তখন ১৯২৮ সাল। বিপ্লবের অগ্নিযুগ! স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে দিতে প্রস্তুত তখন ভারতের বহু বীর সন্তান। চালু হয়েছে সাইমন কমিশন। তারই প্রতিবাদে লাহোরের তখন বেরিয়েছে মিছিল। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দিলেন লালা লাজপত রায়। সঙ্গে ছিলেন ভগৎ সিংও। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না! কয়েকদিনের মধ্যেই পুলিশের অমানুষিক অত্যাচার এবং লাঠির আঘাতে প্রাণ হারালেন তিনি।

তবে তাঁর এই মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারলেন না সঙ্গী ভগৎ সিং। প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন তিনি। মনস্থির করলেন তিনিও নেবেন প্রতিশোধ। যেমন ভাবা আর তেমনই কাজ! প্রতিশোধ নিতে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন ভগৎ। সঙ্গী ছিলেন রাজগুরু এবং শুকদেবও। তারপরই চাউর হয়ে গেল তা। পুলিশের কাছেও পৌঁছালো খবর। সারা লাহোরে জুড়ে তখন পুলিশের কড়া নজরদাড়ি৷ ভগৎ সিংকে খুঁজতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তল্লাশি চালাতে লাগল ব্রিটিশবাহিনী। তবে সাহেবের ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলেন ভগৎ সিং।

এরপর ১৯২৯ সালে ভগৎ সিং তাঁর আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্ধু বটুকেশ্বর দত্তকে সঙ্গে নিয়ে ইংরেজদের বোমা মারেন। এরপর স্বাধীনতার স্বপক্ষে দৃপ্তভঙ্গীতে স্লোগানও দিয়ে যাচ্ছিলেন দু'জনে। তবে সেবার আর পুলিশের হাত থেকে রেহাই মেলেনি। ব্রিটিশ বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার করে। সন্ডার্সকে হত্যার অপরাধে ভগৎ সিং ও তাঁর দুই সঙ্গী সুখদেব ও রাজগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ হত্যার তিনবছর পর ফাঁসি হয় তাঁদের। নিজেদের প্রাণের তোয়াক্কা না করেই এভাবেই দেশের উদ্দেশ্যে নিজেদের উজার করে দিয়েছিলেন ভগৎ সিং সহ দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। ভগৎ সিংয়ের জন্মদিবসে মহান বিপ্লবীর প্রতি রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য।