মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

তুষারঝড়ে আটকে পড়েও মৃত্যুমুখ থেকে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি, শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম | আপডেট: জুন ৪, ২০২৩, ০৮:৩৪ এএম

তুষারঝড়ে আটকে পড়েও মৃত্যুমুখ থেকে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি, শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
তুষারঝড়ে আটকে পড়েও মৃত্যুমুখ থেকে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি, শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চন্দননগরের বাড়িতে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি বসাক। মাকুল জয় করে ফেরার পথে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রায় ২২ ঘণ্টা তুষারঝড়ে আটকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন।

মাকুল জয় করার পাশাপাশি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পিয়ালি শোনালেন তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। পিয়ালি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘শেরপারাতো বুঝতে পারছিল না, ফাঁটলের মধ্যে কোনদিকে যেতে হবে? কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না আমরা। আর অত বড় বিশাল পাহাড়ে, বোঝা যায় না। এইবারে আমরা চারজনে দড়ি বেঁধে নিয়ে নামছিলাম। কারণ কেউ যদি ফাঁটলে পড়ে যায়, তাঁকে যাতে তোলার সুযোগ পাওয়া যায়। এইভাবে নামতে নামতে, আন্দাজেই নামছি। তখন আমরা দড়িটা খুঁজে পেয়েছিলাম। এমন সময়ে তখন আমরা দেখি যে অন্য দেশের বাসিন্দা এক পর্বত আরোহী, তারও মর মর অবস্থা। তাঁকে তুলতে তুলতে আমাদের ৫ ঘণ্টা ওইখানটায় কেটে যায়। এই পরিস্থিতিতে আমিও চোখে প্রায় দেখতে পাচ্ছিলাম না। এদিকে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় শেরোপারাও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এরপর উদ্ধার করতে হবে, সেই জন্য ওরা চলে যায়। এদিকে আমি ওখানে একা থেকে যাই। রাতেই তুষারঝড় ওঠে। এরপর পায়ের আঙুলের ডগার উপর ভর দিয়ে আমি ২২ ঘণ্টা ওখানে ছিলাম।’

জানা গিয়েছে, ১৭ মে সামিট করে ফেরার পথে তুষার ঝড়ের মধ্যে পড়েছিলেন পিয়ালি। ৭৫ ডিগ্রি ঢালের মধ্যে জুতোয় লাগানো ক্রাম্পনের ওপর ভর করে প্রায় ২২ ঘন্টা থাকার পরে এক রাশিয়ান পর্বতারোহি ও তাঁর শেরপা পিয়ালিকে দেখতে পায়। তাঁরা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করেন কাঠমান্ডুতে। এরপর শেরপারাই এসে কোনভাবে পিয়ালিকে উদ্ধার নিয়ে আসেন ক্যাম্প থ্রি-তে। তিনি আগেই তুষার ঝড়ে স্নো ব্লাইন্ডনেস হওয়ার জন্য চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না। সেই অবস্থায় কোনওভাবে তাঁকে ধরে ধরে ক্যাম্প থ্রি-তে নামানো হয়। এরপর সেখান থেকে বেস ক্যাম্পে নামানো হয় পিয়ালিকে।

এরপর বেসক্যাম্প থেকে হেলিকপ্টারে করে পিয়ালিকে নিয়ে আসা হয় নেপালে লুকলাতে। সেখানেই বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পিয়ালির দুপায়ের চারটে আঙুল ফ্রস্ট বাইটের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেরে উঠতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তাতেও কিন্তু বিন্দুমাত্র দমছেন না পিয়ালি। একটু সুস্থ হলেই আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা, চো ইউ, সিসা পাংমা-সহ আরও আট হাজারের বেশি পিকগুলোর লক্ষ্যে পাড়ি দেবেন পিয়ালি। অপরদিকে, ৩ জুন বাড়ি ফিরতেই প্রতিবেশিরা উপস্থিত হয় পিয়ালির বাড়িতে। তাঁরা ফুলের মালা পড়িয়ে অভ্যর্থনা জানায় ঘরের মেয়ে পিয়ালিকে।

সম্প্রতি মাকালু শৃঙ্গ জয় করেছেন চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। তাঁর এই জয়ের পরই নেপালের এজেন্সি পাইওনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার জানিয়েছিল যে, সকাল সাতটা থেকে আটটা নাগাদ, মাউন্ট মাকালু যা বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ, সেটি জয় করেন পিয়ালি বসাক। এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের পর আরও দুটি হাট হাজারি শৃঙ্গ জয় করলেন চন্দনগরের পাহাড় কন্যা। উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ অন্নপূর্ণা ও মাকালু পর্বত শৃঙ্গ জয় করার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পর্বতারোহী পিয়ালি। প্রসঙ্গত, ১৭ এপ্রিল সোমবার সকালে পৃথিবীর দশম উচ্চতম (৮০৯১ মিটার) অন্নপূর্ণা পর্বত শৃঙ্গ জয় করেন। ২০১৮ সালে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসুলু জয় করেছিলেন পিয়ালি। তারপর ২০২১ সালে সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেন। পরের বছরই ২০২২ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর এভারেস্টে ওঠেন পিয়ালি। এখানেই শেষ নয়, এভারেস্ট জয়ের ২ দিন পরেই পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ লোৎসেও জয় করেন তিনি।