শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ঘুগনি বেচা বাংলার এই মেয়েই খেলবেন ভারতীয় ক্রিকেট ‘এ’ দলে! শ্রীলেখাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে দেশ

০৫:৫৭ পিএম, নভেম্বর ১২, ২০২১

ঘুগনি বেচা বাংলার এই মেয়েই খেলবেন ভারতীয় ক্রিকেট ‘এ’ দলে! শ্রীলেখাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে দেশ

পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বড়বেলুন গ্রামের কিশোরী শ্রীলেখা রায়। সংসারের হাল ধরতে একসময় বিক্রি করতে হয়েছে ঘুগনি। তবু স্বপ্নকে মরে যেতে দেননি। কঠিন অধ্যবসায় আর মানসিক জোরেই আজ নিজের লক্ষ্যে সফল তিনি। সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট ‘এ' দলের হয়ে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেলেন শ্রীলেখা। ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয়! কোনও প্রতিকূলতাই যে ইচ্ছাশক্তির কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না! এই কথাগুলিকে সত্যি প্রমাণ করে দেখালেন বাংলার এই মেয়ে।

বাবা ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তিনি ছিলেন একজন ফুটবলার। শ্রীলেখার যখন মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, তখনই মারা যান বাবা। সংসারের ভার এসে পড়ে মা, দিদা আর ছোট্ট শ্রীলেখার কাঁধে। মা করতেন দিন মজুরের কাজ। আর দিদার বানানো ঘুগনি পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন শ্রীলেখা। তবে রোজগারের তাগিদে ছুটলেও তার লক্ষ্য ছিল স্থির। ছেলেবেলা থেকেই বাবাকে দেখে ফুটবলের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। তবে বাড়ির অমতে শুরু করেন ক্রিকেট খেলা। সেই থেকেই শুরু সংগ্রাম।

২০১৫ সাল থেকে শুরু শ্রীলেখার ক্রিকেট খেলা। অগ্রগামী ক্রিকেট একাডেমি নামে স্থানীয় একটি ক্লাবের কর্তারা শ্রীলেখাকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রাজি হন। যদিও শুরুর দিকে অন্যান্যদের মত ব্যাট-বলের সুযোগ পেতেন না শ্রীলেখা। তবে সুযোগ পেয়েই নিজের প্রতিভা দেখাতে শুরু করেন তিনি। তখনই এই ছোট্ট মেয়েটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা খুঁজে পান ভাতারের ওই ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক অনির্বাণ হাজরা, নীলকন্ঠ পাঁজা ও রাহুল আলমরা।

এরপর চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও দুর্গাপুরে ক্রিকেটের কোচিং নেন শ্রীলেখা। পরবর্তীতে কলকাতার সিএবি লিগে ২০১৭- ২০১৮ বর্ষে মিজোরামে অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ পান। সেই লিগে পাঁচটি একদিনের ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচে ৩০ বলে অপরাজিত ২১ রান ও ছয় ওভার বল করে একটি মেডেন সহ মাত্র ৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি। তারপরেই নির্বাচকদের নজরে আসেন।

সম্প্রতি অনুর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেট চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ভারতের হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রীলেখা। তাঁর এই সাফল্যে আপ্লুত পরিবার। মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু। তবে শ্রীলেখার স্বপ্ন আরও বড়। তিনি চান জাতীয় সিনিয়র দলে সুযোগ পেতে। সেখানে নিজের ছাপ রাখতে মরিয়া তিনি। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের এই মেয়ের এই অদম্য লড়াইকে এখন কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ।